البحث

عبارات مقترحة:

التواب

التوبةُ هي الرجوع عن الذَّنب، و(التَّوَّاب) اسمٌ من أسماء الله...

المجيد

كلمة (المجيد) في اللغة صيغة مبالغة من المجد، ومعناه لغةً: كرم...

الرءوف

كلمةُ (الرَّؤُوف) في اللغة صيغةُ مبالغة من (الرأفةِ)، وهي أرَقُّ...

জাদুকর্ম, জ্যোতিষ ও দৈবকর্ম এবং এতদসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ইসলামের বিধান

البنغالية - বাংলা

المؤلف আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায ، মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
القسم كتب وأبحاث
النوع نصي
اللغة البنغالية - বাংলা
المفردات السحر
জাদুকর্ম, জ্যোতিষ ও দৈবকর্ম এবং এতদসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ইসলামের বিধান : মূল্যবান পুস্তকটিতে কুরআন ও সুন্নাহ্‌র আলোকে জাদু, জ্যোতিষ এবং জাদুকর ও জ্যোতিষী সংক্রান্ত বিধান বর্ণিত হয়েছে। অনুরূপভাবে কীভাবে শরী‘আত-সমর্থিত পদ্ধতিতে জাদুগ্রস্ত লোককে চিকিৎসা করা যাবে তা বর্ণনা করা হয়েছে।

التفاصيل

জাদুকর্ম, জ্যোতিষ ও দৈবকর্ম এবং এতদসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ইসলামের বিধান অনুবাদকের কথা  জাদুকর্ম, জ্যোতিষ ও দৈবকর্ম এবং এতদসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ইসলামের বিধান[ بنغالي – Bengali – বাংলা ]আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ.—™অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহীসম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া অনুবাদকের কথাজীবনের সর্বক্ষেত্রেই আল্লাহর নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করে চলার মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও কল্যাণ নিহিত। এ ছাড়া আর সকল মতের ও সকল পথের অনুসরণের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অমঙ্গল ও অশান্তির বীজ। জাদুকর্ম, দৈবকর্ম ও জ্যেতিষকর্ম চর্চা করা- যার মাধ্যমে মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জানতে পারার দাবি করা হয় এবং বিপদাপদ ও রোগ ব্যাধি দূর করা যায় বলে ধারণা করা হয় -এ সবই ইসলামী শরী‘আতে সুস্পষ্টভাবে হারাম এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের বিরোধী। অথচ এসব কাজ চর্চার মাধ্যমে এক-শ্রেণির মানুষ জনসাধারণকে রোগের চিকিৎসা, বিপদাপদ দূর করা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারিত করছে। ফলে সংশ্লিষ্ট লোকজনের ঈমান, আমল ও আকীদা যেমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়ছে, তেমনি এসব কর্ম-চর্চাকারীরা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও প্রতারণার জাল বিস্তার করে সমাজকে অসুস্থ করে তুলছে।এরকম পরিস্থিতিতে অত্র বিষয়ের উপর অতি সংক্ষেপে প্রাঞ্জল ভাষায় লিখা শাইখ আবদুল আযীয ইবন বায রহ.-এর লিখা ছোট্ট পুস্তিকাটি আমি অনুবাদ করি। আমার বিশ্বাস যারা আল্লাহকে ভয় করে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে সফলতা অর্জন করতে চায়, তারা অত্র বিষয়ের ওপর পুস্তিকাটিতে প্রয়োজনীয় আদর্শ ও হিদায়াতের পথ খুঁজে পাবে। আল্লাহ গ্রন্থকার ও অনুবাদকের এ শ্রমটুকু কবুল করুন। আমীন॥বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমসমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং দুরুদ ও সালাম সেই মহান ব্যক্তির ওপর বর্ষিত হোক যার পরে আর কোনো নবী নেই।সাম্প্রতিক কালে জাদু ও দৈবকর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাধির চিকিৎসা করতে সক্ষম- এমন দাবিদার লোকদের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমাজের অশিক্ষিত শ্রেণির মূর্খতা আর নির্বুদ্ধিতাকে পুঁজি করে বিভিন্ন দেশে তারা তাদের এ পেশাকে সম্প্রসারিত করে চলেছে। আমি তাই আল্লাহর দেওয়া নির্দেশ পালন এবং বান্দাদের সঠিক পথে চলার উপদেশ পালনের লক্ষ্যে এতদুভয়ের মধ্যে ইসলাম ও মুসলিম জনতার ওপর যে গুরুতর বিপদ রয়েছে, সে সম্পর্কে আলোকপাত করতে চাই। কেননা এ উভয় কর্মে রয়েছে আল্লাহ ব্যতীত অন্য সত্ত্বার সাথে (নির্ভরতামূলক) সম্পর্কস্থাপন এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ লঙ্ঘন।তাই আমি আল্লাহর সাহায্য কামনা করে বলছি, সকল মুসলিম মনীষীদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ বৈধ। আর যে কোনো মুসলিম ব্যক্তিরই অধিকার রয়েছে যে, সে আভ্যন্তরীণ রোগের ডাক্তার কিংবা শৈল চিকিৎসক অথবা মানসিক রোগের ডাক্তার কিংবা অনুরূপ যে কারও কাছে যেতে পারে, যাতে তিনি তার রোগ-ব্যাধি চিহ্নিত করে চিকিৎসা শাস্ত্রে তার জ্ঞান অনুযায়ী শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত পথ্য দ্বারা তার চিকিৎসা করেন। কেননা এটা সাধারণ বৈধ পন্থাসমূহ অবলম্বনেরই অন্তর্গত। উপরন্তু এ ধরনের পন্থাবলম্বন আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পরিপন্থী নয়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা রোগ দিয়েছেন এবং সে রোগ নিরাময়ের ঔষধও বাতলে দিয়েছেন। যার জানার সে তা জেনেছে এবং যে জানে নি, এ পথ্য তার অজ্ঞাতই থেকে গেছে। অবশ্য আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ওপর হারাম করেছেন এমন কোনো বস্তুকে তার রোগ নিরাময়ের উপায় নির্ধারণ করেন নি।সুতরাং অসুস্থ ব্যক্তির জন্য সেই সব গণক, জ্যোতিষী ও দৈবজ্ঞদের কাছে যাওয়া বৈধ নয়, যারা দাবি করে যে, তাদের কাছে অসুস্থ ব্যক্তির রোগ চিহ্নিত করার গায়েবী জ্ঞান রয়েছে। তদ্রূপ অসুস্থ ব্যক্তির জন্যও এসব গণক ও দৈবজ্ঞদের দেওয়া তথ্য ও সংবাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা বৈধ নয়। কেননা তারা গায়েবী বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করেই এসব বলে থাকে কিংবা তারা তাদের ঈপ্সিত বিষয়ে সাহায্য নেওয়ার জন্য জিন্নদের হাযির করে থাকে। এদের ব্যাপারে শর‘ঈ হুকুম হলো, এরা কুফুরী ও ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত যদি তারা গায়েবী জ্ঞান আছে বলে দাবি করে।ইমাম মুসলিম রহ. তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,«من أتى عرافا فسأله عن شيء لم تقبل له صلاة أربعين ليلة»“যে ব্যক্তি কোনো দৈবজ্ঞের কাছে এসে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল হবে না’’।আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:«من أتى كاهنا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل علي محمد صلى الله عليه وسلم»“যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে আসে এবং সে যা বলে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ সত্যের প্রতি কুফুরী করল।’’ এ হাদীসটি আবু দাউদ ও সুনানের চারটি গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। আর হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলে অন্য শব্দে বর্ণনা করেছেন।«من أتى عرافا أو كاهنا فصدقه فيما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه و سلم»“যে ব্যক্তি কোনো দৈবজ্ঞ বা গণকের কাছে আসে এবং তার বক্তব্যকে সত্য বলে মেনে নেয়, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ সত্যকে অস্বীকার করল।’’ ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:«ليس منا من تطير أو تطير له، أو تكهن أو تكهن له، أو سحر أو سحر له ومن أتى كاهنا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد»“যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট কিছুর ভিত্তিতে কোনো কিছু অশুভ বলে ঘোষণা দেয় কিংবা যার জন্য (তার চাওয়া অনুসারে) অশুভ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়; যে ব্যক্তি গণনা করে কিংবা যার জন্য (তার চাওয়া অনুসারে) গণনা করা হয়; যে ব্যক্তি জাদু করে কিংবা যার জন্য (তার চাওয়া অনুসারে) জাদু করা হয়, তাদের কেউই আমাদের অন্তর্গত নয়। আর যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে এসে তার বক্তব্যকে সত্য মনে করে, সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ সত্যকে অস্বীকার করল’’। হাদীসটি বাযযার উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন।উপরে বর্ণিত হাদীসসমূহে দৈব জ্ঞানের দাবিদার, গণক, জাদুকর ও তদনুরূপ লোকদের কাছে আসতে এবং তাদেরকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করতে ও তাদের বক্তব্য সত্য বলে বিশ্বাস করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে ভয় প্রদর্শন ও করা হয়েছে। সুতরাং শাসকবর্গ ও মানুষকে সৎ কাজের আদেশদানের এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ- যাদের হাতে ক্ষমতা ও শক্তি রয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ গণক, দৈব জ্ঞানের দাবিদার ও অনুরূপ পেশাজীবীদের কাছে আসতে লোকদের নিষেধ করা, হাটে-বাজারে ও অন্যত্র যে কোনো ধরনের দৈবজ্ঞান আদান প্রদান নিষিদ্ধ করা, দৈবজ্ঞ ও তাদের কাছে যারা আসে সবার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।তাদের কথা কোনো কোনো ব্যাপারে সত্য বলে প্রমাণিত হওয়ার ফলে এবং এক শ্রেণির লোক তাদের কাছে বেশি আনাগোনা করার ফলে তাদের দ্বারা কারো প্রতারিত হওয়া ঠিক নয়। কারণ ঐ শ্রেণির লোকেরা মূলত মূর্খ। তাই তাদের দ্বারা প্রতারিত হওয়া অনুচিত। কেননা এতে গুরুতর পাপ, মহাবিপদ ও খারাপ পরিণতি থাকায় এবং যারা এসব কাজে লিপ্ত তারা মিথ্যাবাদী ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক হওয়ায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসতে, প্রশ্ন করতে এবং তাদেরকে সত্যবাদী হিসাবে প্রতিপন্ন করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে আলোচ্য হাদীসসমূহে এও প্রমাণিত হয় যে, গণক ও জাদুকররা কাফির। কেননা তারা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার দাবি করছে, যা কিনা কুফুরী। তদুপরি তারা আল্লাহকে ছেড়ে জিনের সেবা ও ইবাদাত-এর মাধ্যমেই তাদের উদ্দেশ্য সাধন করছে। অথচ এ কাজও কুফুরী এবং আল্লাহর সাথে শরীক করারই নামান্তর। যে ব্যক্তি তাদের অদৃশ্য জ্ঞানের দাবিকে সত্য প্রতিপন্ন করে সে ও তাদেরই অনুরূপ। আর যে সব ব্যক্তি এ বিষয়গুলো এমন লোকদের কাছ থেকে গ্রহণ করে, যারা তা পরস্পর আদান-প্রদান করে থাকে, সে সব ব্যক্তির সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব লোক যাকে চিকিৎসা বলে ধারণা করে থাকে, তাকে মেনে নেওয়া ও গ্রহণ করা কোনো মুসলিমের জন্য জায়েয নেই। যেমন, বিড়-বিড় করে মন্ত্রোচ্চারণ কিংবা পানিতে ইস্পাত চুবানো ইত্যাদি আরও অনেক কুসংস্কার যা তারা করে থাকে-কোনটাই জায়েয নয়। কেননা তা দৈবকর্ম চর্চা ও মানুষকে বিভ্রান্ত করারই নামান্তর। এসব ব্যাপারগুলোকে যারা মেনে নেয়, তারা মূলতঃ এ লোকদেরকে তাদের বাতিল ও কুফুরী কাজে সহযোগিতা করলো। অনুরূপভাবে কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য জ্যোতিষী ও দৈব জ্ঞানের দাবিদারদের কাছে গিয়ে একথা জিজ্ঞেস করা জায়েয নেই যে, তার ছেলে কিংবা তার কোনো আত্মীয় কাকে বিয়ে করবে? কিংবা স্বামী-স্ত্রী ও তাদের উভয়ের পরিবারে ভালবাসা ও মিল-মহব্বত হবে নাকি শত্রুতা ও দূরত্বের সৃষ্টি হবে ইত্যাদি। কেননা এসব সে গায়েবী ও অদৃশ্য জ্ঞানেরই অন্তর্গত যা শুধু মহান আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আর কেউ জানে না।জাদু বিদ্যা হারাম ও কুফুরী। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা সূরা আল-বাকারায় হারুত-মারুত নামক দুই ফিরিশতার ব্যাপারে বলেছেন :﴿وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنۡ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَآ إِنَّمَا نَحۡنُ فِتۡنَةٞ فَلَا تَكۡفُرۡۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنۡهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِۦ بَيۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَزَوۡجِهِۦۚ وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِۦ مِنۡ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنفَعُهُمۡۚ وَلَقَدۡ عَلِمُواْ لَمَنِ ٱشۡتَرَىٰهُ مَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنۡ خَلَٰقٖۚ وَلَبِئۡسَ مَا شَرَوۡاْ بِهِۦٓ أَنفُسَهُمۡۚ لَوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ﴾ [البقرة: ١٠٢]“তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা নিছক একটি পরীক্ষা মাত্র; কাজেই তুমি কুফুরী করো না। তা সত্ত্বেও তারা ফিরিশতাদ্বয়ের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো যায়। অথচ তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্বারা কারো অনিষ্ট করতে পারত না। এতদসত্ত্বেও তারা তা-ই শিখত যা তাদের ক্ষতি করত এবং কোনো উপকারে আসতো না। তারা ভালোভাবে জানে যে, যে কেউ তা খরিদ করে (অর্থাৎ জাদুর আশ্রয় নেয়) তার জন্য আখিরাতে কোনো অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিকিয়ে দিচ্ছে তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত! [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০২]এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, জাদু বিদ্যা কুফুরী এবং জাদুকররা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে। আয়াতটি দ্বারা আরও প্রমাণিত যে, যে জাদু ভাল-মন্দের আসল কার্যকারণ নয়, বরং আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত জাগতিক নিয়ম ও নির্দেশেই মূলত তা প্রভাব বিস্তার করে থাকে। কেননা আল্লাহ তা‘আলাই ভালো ও মন্দ সৃষ্টি করেন। এ সমস্ত মিথ্যা অপবাদ আরোপকারী ব্যক্তিগণ যারা মুশরিকদের থেকে এ ধরনের জ্ঞান অর্জন করেছে এবং এর মাধ্যমে দুর্বল-চিত্তের লোকদের উপর বিভ্রান্তির প্রহেলিকা সৃষ্টি করেছে- তাদের দ্বারা সাধিত ক্ষতি ইতিমধ্যেই বিশাল আকার ধারণ করেছে। অথচ স্মরণ রাখা দরকার আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। তিনিই তো আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম তত্ত্বাবধায়ক।অনুরূপভাবে আয়াতে কারীমাতে এদিকেও ইঙ্গিত রয়েছে যে, যারা জাদু শিখে তারা মূলত এমন বিদ্যাই শিখে যা তাদের ক্ষতি করে এবং কোনো উপকারে আসে না, আর আল্লাহর কাছে তাদের কিছুই পাওয়ার নেই। এটা অত্যন্ত বড় সতর্কবাণী, যা দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার ইঙ্গিতই বহন করছে আর এও বুঝা যাচ্ছে যে, তারা অত্যন্ত নগণ্য মূল্যে নিজেদেরকে বিকিয়ে দিয়েছে তাই আল্লাহ তা‘আলা এব্যাপারে তাদের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন,﴿وَلَبِئۡسَ مَا شَرَوۡاْ بِهِۦٓ أَنفُسَهُمۡۚ لَوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ﴾ [البقرة: ١٠٢]“যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিকিয়ে দিচ্ছে তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত!” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১০২]জাদুকর, গণক এবং সকল প্রকার ভোজবাজীকর ও ভেল্কিবাজদের অমঙ্গল থেকে আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করি। আমরা তাঁর কাছে এও কামনা করি যে, তিনি যেন এসব লোকের ক্ষতি থেকে মুসলিমদেরকে রক্ষা করেন এবং এসব লোক সম্পর্কে সতর্ক করা ও তাদের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম কার্যকর করার জন্য মুসলিম শাসকদের তাওফীক দান করেন। যাতে তাদের ক্ষতি ও নিকৃষ্ট কাজ হতে আল্লাহর বান্দাগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। নিশ্চয় তিনি দানশীল মহান। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি স্বীয় রহমাত ও অনুগ্রহস্বরূপ এবং তাঁর নিয়ামতের পূর্ণতা সাধনকল্পে তাদের জন্য এমন সব ব্যবস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন যদ্বারা জাদুকর্ম সংঘটিত হওয়ার পূর্বে এর অমঙ্গল থেকে তারা রক্ষা পেতে পারে এবং এমন পদ্ধতি ও তাদের জন্য বর্ণনা করে দিয়েছেন যাতে জাদুকর্ম সংঘটিত হওয়ার পর তারা এর চিকিৎসা করতে পারে। যা দ্বারা জাদু সংঘটিত হওয়ার পূর্বে এর বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং শরী‘আতে বৈধ এমন যে সব বস্তু দ্বারা জাদু সংঘটিত হওয়ার পর এর চিকিৎসা করা যায়-সে সব কিছু নিচে বর্ণনা করা হলো।যে সব বস্তু দ্বারা জাদু সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই জাদুর ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী হল শরী‘আত সম্মত যিকির-আযকার এবং হাদিসে বর্ণিত যাবতীয় দো‘আসমূহ। আর এসবের মধ্যে রয়েছে প্রত্যেক ফরয নামাযের সালাম ফিরিয়ে শরী‘আত অনুমোদিত যিকির-আযকার পাঠের পর এবং নিদ্রা যাওয়ার সময় আয়াতুল কুরসী পড়া। আয়াতুল কুরসী কুরআন কারীমের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত। আয়াতটি নীচে দেওয়া হলো:﴿ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا يَ‍ُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥﴾ [البقرة: ٢٥٥] “আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো হক মাবুদ নেই, তিনি জীবিত, সবার তত্ত্বাবধায়ক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া ? তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু রয়েছে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞাত বিষয় হতে কোনো কিছুকেই তারা আয়ত্তাধীন করতে পারে না। কিন্তু কোনো বিষয় যদি তিনি নিজেই জানাতে চান, তবে অন্য কথা। তাঁর কুরসী সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য কষ্ট সাধ্য নয়। তিনি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এবং মহান।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৫]এসব যিকির ও দো‘আর মধ্যে আরও রয়েছে প্রত্যেক ফরয সালাতের পর قل هو الله أحد ও قل أعوذ برب الفلق এবং قل أعوذ برب الناس পড়া। এই সূরাগুলো ফজরের পর দিবসের প্রথম ভাগে ও মাগরিবের পর রাত্রির শুরুতে এবং ঘুমের সময় তিনবার করে পড়া। এছাড়া রাত্রির প্রথমভাগে সূরা আল-বাকারা-এর নিম্নলিখিত শেষ দুই আয়াত পড়া। আয়াতদ্বয় হলো:﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٢٨٦﴾ [البقرة: ٢٨٥، ٢٨٦] “রাসূল ঈমান এনেছেন সে সব বিষয়ের প্রতি যা তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুমিনগণও। সকলেই ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। তারা বলে, আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে তারতম্য করি না। আর এও বলে: আমরা শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব! তোমার ক্ষমা চাই এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আল্লাহ কাউকে তাঁর সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না। যে পুণ্য সে অর্জন করে এর প্রতিফল তার জন্য এবং সে যে মন্দ কাজ করে সে কাজের প্রতিফল ও তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না। হে আমাদের রব! আর আমাদের উপর এমন ভারী বোঝা অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদে ওপর অর্পণ করেছো। হে আমাদের প্রভু! আর আমাদের উপর এমন কাজের ভার চাপিয়ে দিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর। [আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৫-২৮৬]রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত:«من قرأ آية الكرسي في ليلة لم يزل عليه من الله حافظ ولا يقربه شيطان حتى يصبح»“যে ব্যক্তি রাতে আয়াতুল কুরসী পাঠ করে, ভোর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে তার উপর একজন হেফাযতকারী নিয়োজিত থাকে এবং শয়তান তার নিকটবর্তী হয় না।’’সহীহ সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এও বর্ণিত যে, তিনি বলেন:»من قرأ الآيتين من آخر سورة البقرة في ليلة كفتاه»“যে ব্যক্তি রাতে সূরা আল-বাকারাহ-এর শেষের দু’টি আয়াত পাঠ করবে, ওটাই তার জন্য যথেষ্ট।’’হাদীসটির মর্মার্থ হলো: “সকল অনিষ্ট হতে তার রক্ষা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট’’।জাদুর ক্ষতি হতে রক্ষা পাওয়ার দো‘আর মধ্যে আরও রয়েছে- রাতদিন এবং কোনো বসতবাড়ি কিংবা মরুভূমিতে অথবা জলে কিংবা অন্তরীক্ষে অবস্থানের সময় নীচের দো‘আটি বেশি বেশি পাঠ করবে:«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ»“আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ বাণী দ্বারা তাঁর নিকট আমি সৃষ্টির যাবতীয় অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি’’।রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,«من نزل منزلا فقال : أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ لم يضره شيء حتى يرتحل من منزله ذلك»“যে ব্যক্তি কোনো স্থানে অবতরণ করার পর বলে: ‘আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ বাণী দ্বারা তাঁর নিকট আমি সৃষ্টির যাবতীয় অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি’- সে ঐ স্থান থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত কোনো কিছুই তার ক্ষতি কারতে পারবে না’’।এসব দো‘আর মধ্যে আরও রয়েছে দিবসের প্রথম ভাগে ও রজনীর শুরুতে নীচের দো‘আটি তিনবার পাঠ করা: «بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ»“আমি সেই আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার নামে শুরু করলে আকাশ ও পৃথিবীর কোনো বস্তুই কোনোরূপ অনিষ্ট সাধন করতে পারেনা। বস্তুত তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা’’।কেননা সহীহ সূত্রানুযায়ী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং এটাই প্রত্যেক মন্দ থেকে নিরাপদ থাকার কারণ। এ সকল যিকির ও দো‘আ জাদু ও অনুরূপ অপকর্মের অমঙ্গল থেকে পরিত্রাণ পাবার সর্বোত্তম পন্থা তাদের জন্য যারা সততা, ঈমান, আল্লাহর প্রতি আস্থা ও নির্ভরতা সহকারে এবং এসব দো‘আর অর্থের প্রতি আন্তরিকতা রেখে এগুলো চর্চা করে। এ একই দো‘আসমূহ জাদু সংঘটিত হবার পরও জাদুর ক্রিয়া দূর করার সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র। অবশ্য পাশাপাশি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি বিনয় প্রকাশ এবং বিপদ ও ক্ষতি দূর করার জন্য প্রার্থনা করতে হবে।আর জাদু ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসায়, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ দো‘আর মধ্যে আরও রয়েছে নিচের দো‘আটি তিনবার পাঠ করা। এটি দ্বারা তিনি তাঁর সাহাবিদেরকে ঝাড়ফুঁক করতেন। দো‘আটি হল:«اللّٰهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ البَأسَ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا»“হে আল্লাহ! যিনি মানুষের পালন কর্তা ! বিপদ দূর করে দাও এবং আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য-দাতা। তোমার আরোগ্য দান ছাড়া কোনো আরোগ্য লাভই সম্ভব নয়। এমন আরোগ্য দাও যার পরে আর কোনো রোগ-ব্যাধি থাকবে না’’।এছাড়া জিবরীল আলাইহিস সালাম যে দো‘আ পাঠ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঝেড়েছিলেন, তা হলো:«بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنٍ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ»“আল্লাহ্‌র নামে আমি আপনাকে ঝাড়ছি, এমন সকল বস্তু থেকে যা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে। আর প্রত্যেক প্রাণীর অমঙ্গল হতে ও ঈর্ষাকারীর বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দান করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ছি’’।এ দো‘আটিও তিনবার পাঠ করতে হবে।জাদু-ক্রিয়া সংঘটিত হবার পর জাদুর কারণে স্ত্রী সহবাস থেকে বাধাগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য খুবই উপকারী চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে সাতটি সবুজ বরই পাতা নিয়ে পাথর বা অনুরূপ কিছু দিয়ে তা ঘষে কোনো পাত্রে রাখা এবং গোসলের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পানি এতে ঢেলে তাতে আয়াতুল কুরসী, সূরা আল-কাফিরূন, সূরা কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, সূরা কুল আ‘উযু বিরাব্বিল ফালাক্ব এবং সূরা ক্বুল আ‘উযু বিরাব্বিন নাস পড়বে। এর সাথে সূরা আল-আ‘রাফ-এর জাদুর আয়াতগুলোও পাঠ করবে। সে আয়াতগুলো হলো:﴿وَأَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنۡ أَلۡقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلۡقَفُ مَا يَأۡفِكُونَ ١١٧ فَوَقَعَ ٱلۡحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١١٨ فَغُلِبُواْ هُنَالِكَ وَٱنقَلَبُواْ صَٰغِرِينَ ١١٩﴾ [الاعراف: ١١٧، ١١٩] “আর আমি মূসার প্রতি ওহী পাঠালাম, “এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা’’। সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল যা তারা বনিয়েছিল জাদু বলে। ফলে সত্য প্রমাণিত হলো এবং বাতিল হয়ে গেল তারা যা কিছু করছিল। সুতরাং তারা সেখানে পরাভূত হলো ও লাঞ্ছিত হয়ে ফিরল’’। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১১৭-১১৯]অনুরূপভাবে সূরা ইউনুস-এর নিম্নলিখিত আয়াতগুলোও পড়বে:﴿وَقَالَ فِرۡعَوۡنُ ٱئۡتُونِي بِكُلِّ سَٰحِرٍ عَلِيمٖ ٧٩ فَلَمَّا جَآءَ ٱلسَّحَرَةُ قَالَ لَهُم مُّوسَىٰٓ أَلۡقُواْ مَآ أَنتُم مُّلۡقُونَ ٨٠ فَلَمَّآ أَلۡقَوۡاْ قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئۡتُم بِهِ ٱلسِّحۡرُۖ إِنَّ ٱللَّهَ سَيُبۡطِلُهُۥٓ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُصۡلِحُ عَمَلَ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٨١ وَيُحِقُّ ٱللَّهُ ٱلۡحَقَّ بِكَلِمَٰتِهِۦ وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡمُجۡرِمُونَ ٨٢﴾ [يونس: ٧٩، ٨٢] “আর ফির‘আউন বলল, আমার কাছে নিয়ে এস সুদক্ষ জাদুকরদেরকে। তারপর যখন জাদুকররা এলো, মূসা তাদেরকে বলল: তোমাদের যা কিছু নিক্ষেপ করার তা নিক্ষেপ কর। অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, মূসা বলল: যা কিছু তোমরা এনেছ তা সবই জাদু- নিশ্চয় আল্লাহ এসব ভণ্ডুল করে দিবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কাজকে সংশোধন করেন না। আল্লাহ সত্যকে সত্যে পরিণত করেন, যদিও পাপীদের তা মনঃপুত নয়’’। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৭৯-৮২]পরিশেষে সূরা ত্বাহা-এর নিম্নের আয়াতগুলো পড়বে:﴿قَالُواْ يَٰمُوسَىٰٓ إِمَّآ أَن تُلۡقِيَ وَإِمَّآ أَن نَّكُونَ أَوَّلَ مَنۡ أَلۡقَىٰ ٦٥ قَالَ بَلۡ أَلۡقُواْۖ فَإِذَا حِبَالُهُمۡ وَعِصِيُّهُمۡ يُخَيَّلُ إِلَيۡهِ مِن سِحۡرِهِمۡ أَنَّهَا تَسۡعَىٰ ٦٦ فَأَوۡجَسَ فِي نَفۡسِهِۦ خِيفَةٗ مُّوسَىٰ ٦٧ قُلۡنَا لَا تَخَفۡ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡأَعۡلَىٰ ٦٨ وَأَلۡقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلۡقَفۡ مَا صَنَعُوٓاْۖ إِنَّمَا صَنَعُواْ كَيۡدُ سَٰحِرٖۖ وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّاحِرُ حَيۡثُ أَتَىٰ ٦٩﴾ [طه: ٦٥، ٦٩]“তারা বলল, হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর, না হয় আমরাই প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বলল: বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের জাদুর প্রভাবে হঠাৎ তাঁর মনে হলো, যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। এতে মূসা মনে মনে কিছুটা ভীতি অনুভব করলেন। আমি বললাম, ভয় পেয়ো না, তুমি বিজয়ী হবে। তোমার ডান হাতে যা আছে তা তুমি নিক্ষেপ কর। তারা যা কিছু করেছে এটা তা গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে তাতো কেবল জাদুকরের কলাকৌশল। জাদুকর যেখানেই আসুক সফল হবে না’’। [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৬৫-৬৯]উপরোক্ত আয়াতসমূহ পানিতে পাঠ করার পর তা থেকে তিন কোষ পরিমাণ পান করবে এবং অবশিষ্টাংশ দিয়ে গোসল করবে। আল্লাহ চাহে-তো এর দ্বারা রোগ দূর হবে। প্রয়োজনে রোগের উপসম হওয়া পর্যন্ত দুই বা ততোধিকবার এ চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে। জাদুর সর্বোত্তম চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ভূমি, পাহাড় কিংবা অন্য কোথাও জাদুর স্থান সম্পর্কে অবগত হওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা। তা জানতে পারলে এবং বের করে নষ্ট করে ফেললে জাদু নিষ্ফল হয়ে যাবে।জাদু হতে রক্ষা পাওয়ার এবং এর চিকিৎসার এই বিষয়গুলো এখানে বর্ণনা করা হলো। আল্লাহ তাওফিক ও সামর্থ্য দেওয়ার মালিক।তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, জাদু-ক্রিয়ার মাধ্যমে জাদুর চিকিৎসা যা কিনা যবেহ কিংবা তদনুরূপ কোনো ইবাদাতের মাধ্যমে জিন্নের নৈকট্য হাসিলেরই নামান্তর- তা কোনোক্রমেই জায়েয নয়। কেননা তা হচ্ছে মূলতঃ শয়তানের কাজ। বরং তা শিরকে আকবার তথা বড় শিরকের অন্তর্গত। অতএব, এমন কাজ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। অনুরূপভাবে গণক, দৈব জ্ঞানের দাবিদার ও বাজীকরদেরকে প্রশ্ন করে তাদের বাতিয়ে দেওয়া পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে জাদুর চিকিৎসা গ্রহণও জায়েজ নাই। কেননা তারা গায়েবী জ্ঞানের দাবি করে এবং মানুষের কাছে তা হেঁয়ালিপূর্ণ করে তুলে ধরে। শুরুতেই বলা হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসতে, তাদের কাছে কোনো কিছু চাইতে ও তাদেরকে সত্য বলে মানতে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত- তাঁকে “নাশরা’’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, এটা শয়তানের কাজ। ইমাম আহমদ ও আবু দাউদ উত্তম সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।‘নাশরা’ হচ্ছে জাদুকৃত ব্যক্তি থেকে জাদুর ক্রিয়া দূর করা। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর একথার অর্থ হল জাহেলী যুগের সে ‘নাশরা’ যা লোকজনের মধ্যে প্রচলিত ছিল। আর তা হল— জাদুকরকে জাদু দূর করার জন্য অনুরোধ করা কিংবা অন্য জাদুকরের কাছে গিয়ে অনুরূপ জাদু দিয়ে জাদুর ক্রিয়া নষ্ট করা।আর শর‘ঈ যিকির ও দো‘আ এবং মুবাহ ঔষধ-পত্র দ্বারা জাদু দূর করায় কোনো অসুবিধা নেই। সে আলোচনা ইতোপূর্বেই করা হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. ও ‘ফাতহুল মাজীদ’ গ্রন্থে শেখ আবদুর রহমান ইবন হাসান রহ. এবং আরও অনেক আলিম এ ধরনের কথাই বলেছেন।পরিশেষে আল্লাহর কছে প্রার্থনা জানাই মুসলিমদেরকে যেন প্রত্যেক মন্দ ও খারাপি থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দেন এবং তাদের দীনকে হিফাযত করেন, তাদেরকে দীনের জ্ঞান দান করেন এবং শরী‘আত বিরোধী প্রত্যেক বস্তু থেকে বাঁচিয়ে রাখেন।ওয়া সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লামা ‘আলা ‘আবদিহী ওয়া রাসূলিহী মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আলিহী ওয়াসাল্লাম॥ জাদুকর্ম, দৈবকর্ম ও জ্যেতিষকর্ম চর্চা করা ইসলামী শরী‘আতে সুস্পষ্টভাবে হারাম এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের বিরোধী। অথচ এসব কাজ চর্চার মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ জনসাধারণকে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারিত করে তাদের ঈমান, আমল ও আকীদা বিনষ্ট করার জাল বিস্তার করে সমাজকে অসুস্থ করে তুলছে। মূল্যবান পুস্তকটিতে কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে জাদু, জ্যোতিষ এবং জাদুকর ও জ্যোতিষী সংক্রান্ত বিধান বর্ণনা করার পাশাপাশি কীভাবে শরী‘আত-সমর্থিত পদ্ধতিতে জাদুগ্রস্ত লোককে চিকিৎসা করা যাবে তা বর্ণনা করা হয়েছে।

المرفقات

2

জাদুকর্ম, জ্যোতিষ ও দৈবকর্ম এবং এতদসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ইসলামের বিধান
জাদুকর্ম, জ্যোতিষ ও দৈবকর্ম এবং এতদসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ইসলামের বিধান