المجيد
كلمة (المجيد) في اللغة صيغة مبالغة من المجد، ومعناه لغةً: كرم...
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ সকল কিছুকে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর যখন তিনি সৃষ্টি কাজ শেষ করলেন, তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক (রেহেম) উঠে দাঁড়ালো এবং রহমানের কোমর আঁকড়ে ধরল। তখন তিনি বললেন, তুমি থামো, সে (রেহেম) বলল, এটা হচ্ছে আপনার নিকট বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমার সাথে যে সু-সম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সাথে সু-সম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব?’ সে (রেহেম /রক্ত সম্পর্ক) বলল, ‘অবশ্যই হে আমার রব।’ আল্লাহ বললেন, ‘তাহলে এ মর্যাদা তোমাকে দেওয়া হলো।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা চাইলে (এ আয়াতটি) পড়ে নাও; «قال: فإذا قال ذلك قال الشيطانُ: حُفِظَ منِّي سائرَ اليوم» ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। ওরা তো তারা, যাদেরকে আল্লাহ অভিশপ্ত করে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২-২৩] সহীহ বুখারীর অপর বর্ণনায় বর্ণিত, তখন আল্লাহ বলেন, “যে তোমার সাথে সু-সম্পর্ক রাখে আমি তার সাথে সু-সম্পর্ক রাখবো আর যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব।”
তার বাণী: «خَلَقَ اللهُ الخلقَ، فلمَّا فرغَ منه» “আল্লাহ সকল কিছুকে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর যখন তিনি সৃষ্টির কাজ শেষ করলেন।” অর্থাৎ মাখলুক সৃষ্টি করার কর্ম সমাপ্ত করলেন। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সৃষ্টির কাজটি কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে, যদিও আল্লাহর কুদরতের নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা নেই এবং একটি অবস্থা (কাজ) তাকে অপর অবস্থা (কাজ) থেকে বিরত রাখতে পারে না। কিন্তু তার হিকমতের দাবি হচ্ছে তিনি কোনো কর্ম কোনো একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করেন। এ ঘটনা একটি প্রমাণ যে, তার কর্মসমূহ তার চাওয়ার সাথে সম্পৃক্ত। যখন তিনি কোনো কিছু করতে চান তখন তিনি তা করেন। আর তার বাণী: «لما فرغ» “যখন তিনি শেষ করলেন।” তার অর্থ এ নয় যে, তিনি সমস্ত জিনিসের সৃষ্টি কর্ম শেষ করে ফেলেছেন। বরং তার সৃষ্টি পর্যায়ক্রমে একটির পর একটি পাওয়া যেতেই থাকবে। কিন্তু তার ইলম, নির্ধারণ ও লিখন আগেই সম্পন্ন হয়েছে, আর সেটাই তার চাওয়া অনুযায়ী দুনিয়াতে বাস্তবায়ন হবে। সুতরাং তাই বাস্তবায়ন হবে যা তার ইলম, নির্ধারণ ও লিখন মোতাবেক আছে এবং তিনি চাচ্ছেন। তার বাণী: «قامت الرَّحِمُ فأخذت بحَقْو الرَّحمن، فقال له: مَه» “তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক উঠে দাঁড়ালো এবং রহমানের কোমর আঁকড়ে ধরল। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি থামো।” হাদীসটির বাহ্যিক শব্দ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, দাঁড়ানো, কথা বলা ইত্যাদি আত্মীয়তার কর্ম। যদিও আত্মীয়তা এমন একটি বস্তু যা মানুষের সাথে স্থাপিত এবং অদৃশ্য সত্ত্বা। কিন্তু আল্লাহর কুদরত মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা মাপা যায় না; (তাই রেহেমের দাঁড়ানোও অনুমাণ করা যাবে না)। এ হাদীসটি মুলতঃ সিফাত সংবলিত হাদীসসমূহের একটি হাদীস। যে হাদীসগুলো সম্পর্কে ইমামগণ এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, তা যেভাবে বর্ণিত সেভাবেই রাখা হবে এবং যারা এসব হাদীসের দাবিকে মানে না তারা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর হাদীসটির বাহ্যিক অর্থ এ কথা প্রমাণ করে না যে, চামড়া, কাতান ও সূতা দ্বারা নির্মিত মানুষ যে সব পোশাক পরিধান করে থাকে আল্লাহর জন্যও সে সব পোশাক-লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি রয়েছে। কারণ, আল্লাহ বলেন, (ليس كمثله شيء وهو السميع البصير). “তার মতো কোনো কিছু নেই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” আর তার বাণী: «قالت: هذا مقامُ العائذِ بك من القَطِيعة» “সে বলল, ‘এটা হচ্ছে আপনার নিকট বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান।’’ এটি মহান স্থান। আর এই স্থান থেকে আশ্রয় প্রার্থণাকারী মহা উসীলার মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করে। হাদীসটি আত্মীয়তা সম্পর্কের মহত্ত্ব ও তা ছিন্ন করার ভয়াবহতা প্রমাণ করে। ছিন্ন করার মানে হলো সম্পর্ক না রাখা। আর সম্পর্ক রাখার অর্থ হলো, আত্মীয়দের প্রতি দয়া করা, তাদের ভালোবাসা, তাদের সহযোগিতা করা, তাদের থেকে কষ্টকে প্রতিহত করা, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের উপকার হয় এমন কিছু অর্জনের প্রতি আগ্রহী থাকা। তার বাণী: «قال: ألَا تَرْضَيْنَ أنْ أصِلَ مَن وصلكِ، وأقطعَ مَن قطعكِ، قالت: بلى يا ربِّ، قال: فذاك» “তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমার সাথে যে সু-সম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সাথে সু-সম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব?’ সে (রেহেম /রক্ত সম্পর্ক) বলল, ‘অবশ্যই হে আমার রব।’’ যে তার আত্মীয়ের প্রতি দয়া করবে আল্লাহ তার প্রতি দয়া করবেন। আর যার প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন তাকে দুনিয়াও আখিরাতের যাবতীয় কল্যাণ ও সৌভাগ্য দান করবেন। অবশ্যই তার প্রতিদান হবে তার রবের সাথে জান্নাতুল ফিরদাউসে অবস্থান করা। কারণ, সম্পর্ক (রেহেম) জান্নাত ছাড়া কোথাও পূর্ণতা লাভ করবে না। জান্নাতে সে তার রবের চেহারার দিক তাকাবে। পক্ষান্তরে যে তার আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে সে অবশ্যই বিচ্ছিন্ন। আল্লাহর শত্রু বিতাড়িত শয়তানের সাথেই তার অবস্থান।