البحث

عبارات مقترحة:

الكريم

كلمة (الكريم) في اللغة صفة مشبهة على وزن (فعيل)، وتعني: كثير...

المقدم

كلمة (المقدِّم) في اللغة اسم فاعل من التقديم، وهو جعل الشيء...

الخالق

كلمة (خالق) في اللغة هي اسمُ فاعلٍ من (الخَلْقِ)، وهو يَرجِع إلى...

তিনটি মূলনীতি ও তার প্রমাণপঞ্জি

البنغالية - বাংলা

المؤلف মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব ، আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
القسم كتب وأبحاث
النوع نصي
اللغة البنغالية - বাংলা
المفردات متون العقيدة
তুমি আল্লাহকে জেনেছ? তার দীনকে? রিসালাত নিয়ে যিনি প্রেরীত হয়েছেন তোমাদের নিকট, চেন তাকে? পরজগতের দীর্ঘ সফরের সূচনায় ব্যক্তি সর্বপ্রথম যে বাস্তবতার মুখোমুখী হবে, তা এই তিনটি প্রশ্ন ও তার উত্তর। প্রশ্নগুলো কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ইসলামের তিন মূলনীতি।

التفاصيل

তিনটি মূলনীতি ও তার প্রমাণপঞ্জি [চারটি বিষয় জানা অবশ্য-কর্তব্য] [তিনটি বিষয় জানা অবশ্য কর্তব্য] [মিল্লাতে ইবরাহীমের মূলকথা] [তিনটি মূলনীতি- الأصول الثلاثة] প্রথম মূলনীতি: রব সম্পর্কে জানা [যেসব ইবাদাতের নির্দেশ আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন] দ্বিতীয় মূলনীতি: প্রমানাদিসহ ইসলাম সম্পর্কে জানা প্রথম পর্যায়: ইসলাম দ্বিতীয় পর্যায় : ঈমান তৃতীয় পর্যায় : ইহসান তৃতীয় মূলনীতি: নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা  তিনটি মূলনীতি ও তার প্রমাণপঞ্জি[ بنغالي – Bengali – বাংলা ]মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহহাব রহ.—™অনুবাদ ও সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া [চারটি বিষয় জানা অবশ্য-কর্তব্য]জেনে নাও, আল্লাহ তোমার ওপর রহমত বর্ষণ করুন! চারটি বিষয়ের জ্ঞানলাভ করা আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এক. ইলম বা দীনী জ্ঞান: আর তা এমন বিদ্যা যার সাহায্যে দলীল-প্রমাণসহ আল্লাহ, তাঁর নবী এবং দীন-ইসলাম সম্পর্কে সম্যক পরিচয় লাভ করা যায়।দুই. ঐ জ্ঞান অনুযায়ী আমল করা।তিন. তার দিকে (মানুষকে) আহ্বান করা।চার. এই কর্তব্য পালনে সম্ভাব্য কষ্ট ও বিপদ-বিপর্যয়ে ধৈর্য ধারণ। উপরোক্ত কথার প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী, ﴿بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ١ وَٱلۡعَصۡرِ ١ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ ٢ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣﴾ [العصر: ١، ٣] “কালের শপথ, সকল মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ সম্পাদন করেছে, আর যারা পরস্পরকে হক্ক তথা সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং ধৈর্য ধারণের নিরন্তর উপদেশ দিয়েছে তারা ব্যতীত।” [সূরা আল-আসর, আয়াত: ১-৩]উপরে বর্ণিত সূরা সম্পর্কে ইমাম শাফে‘ঈ রহ. এই অভিমত পেশ করেছেন, “যদি আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির ওপর প্রমাণ পেশ করার জন্য এ সূরা ছাড়া অন্য কোনো কিছু অবতীর্ণ না করতেন, তাহলে এ সূরাই তাদের জন্য সব দিক দিয়ে যথেষ্ট হতো।”ইমাম বুখারী রহ. তার সংকলিত সহীহ বুখারীর একটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন: ‘বিদ্যার স্থান হচ্ছে কথা ও কাজের পূর্বে।’ এর সমর্থনে কুরআনের ঘোষণা:﴿فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۢبِكَ﴾ [محمد: ١٩] “কাজেই জেনে রাখো, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনোই ইলাহ নেই। আর (হে রাসূল) নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯]এখানে কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান ও বিদ্যার কথাই আল্লহ প্রথমে উল্লেখ করেছেন।  [তিনটি বিষয় জানা অবশ্য কর্তব্য]জেনে রাখো, আল্লাহ তোমার ওপর রহমত বর্ষণ করুন। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর নিন্মোক্ত তিনটি বিষয়ে জ্ঞানলাভ এবং সেমতে কাজ করা অবশ্য কর্তব্য।এ তিনটি বিষয় হচ্ছে, এক. আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, জীবিকা প্রদান করেছেন এবং তিনি আমাদেরকে কোনো দায়িত্বহীনভাবে ছেড়ে দেন নি। (বরং হেদায়াতের জন্য) তিনি আমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন। যে ব্যক্তি তাঁর আদেশ পালন করবে তার বাসস্থান হবে জান্নাত এবং যে ব্যক্তি তাঁর আদেশ অমান্য করবে তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। এর প্রমান হচ্ছে আল্লাহর বাণী, ﴿إِنَّآ أَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡكُمۡ رَسُولٗا شَٰهِدًا عَلَيۡكُمۡ كَمَآ أَرۡسَلۡنَآ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ رَسُولٗا ١٥ فَعَصَىٰ فِرۡعَوۡنُ ٱلرَّسُولَ فَأَخَذۡنَٰهُ أَخۡذٗا وَبِيلٗا ١٦﴾ [المزمل: ١٥، ١٦] “নিশ্চয় আমরা তোমাদের প্রতি একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের ওপর সাক্ষীস্বরূপ, যেমন পাঠিয়েছিলাম একজন রাসূল ফির‘আউনের প্রতি। কিন্তু ফির‘আউন সেই রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করলো। ফলে আমরা তাকে পাকড়াও করলাম অত্যন্ত কঠোরভাবে।” [সূরা আল-মুয্‌যাম্মিল, আয়াত: ১৫-১৬]দুই. ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে আল্লাহ কাউকেই তাঁর অংশীদার বা শরীক হিসেবে পছন্দ করেন না- চাই তা কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতা হোন কিংবা কোনো প্রেরিত রাসূলই হোন না কেন। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [الجن: ١٨] “নিশ্চয় সাজদাহর স্থানসমূহ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আহ্বান করো না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]তিন. যারা রাসূলের আনুগত্য করেন এবং আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করেন, তাঁদের পক্ষে এমন লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা মোটেই জায়েয নয়, যারা আল্লাহ ও রাসূলের বিরূদ্ধাচরণকারী। ঐ লোকেরা যদি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও হয়, তথাপিও নয়। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَوۡ كَانُوٓاْ ءَابَآءَهُمۡ أَوۡ أَبۡنَآءَهُمۡ أَوۡ إِخۡوَٰنَهُمۡ أَوۡ عَشِيرَتَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٖ مِّنۡهُۖ وَيُدۡخِلُهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ أُوْلَٰٓئِكَ حِزۡبُ ٱللَّهِۚ أَلَآ إِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٢٢﴾ [المجادلة: ٢٢] “আল্লাহ ও শেষ দিবসের ওপর ঈমান পোষণকারী এমন কোনো সম্প্রদায়কে আপনি পাবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে। হোক না কেন তারা ঈমানদারদের পিতা, পুত্র বা ভ্রাতা কিংবা গোত্র-গোষ্ঠী। আল্লাহ এদের হৃদয়ে ঈমানকে শক্তিশালী করে রেখেছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরিত (ফিরিশতা তথা) আত্মিক শক্তি দ্বারা তাদেরকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করে দেবেন যার নিম্নদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী, সেখানে তারা অবস্থান করবে চিরকাল। আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন তাদের ওপর এবং তারাও সন্তুষ্ট আল্লাহর ওপর। বস্তুত এরাই হচ্ছে আল্লাহর সেনাদল। জেনে রাখো, আল্লাহর এ সেনাদলই হবে পরিণামে সফলকাম।” [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ২২] [মিল্লাতে ইবরাহীমের মূলকথা]জেনে রাখো (আল্লাহ তাঁর আনুগত্য বরণ ও আদেশ পালনের জন্যে তোমাকে পথ প্রদর্শন করুন): নিশ্চয় একনিষ্ঠ আনুগত্যই হলো মিল্লাতে ইবরাহীমের মূলকথা। তা এই যে তুমি শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে এবং শুধুমাত্র তাঁরই জন্য দীনকে খালেস করবে। আর আল্লাহ সকল মানুষকে এরই আদেশ দিয়েছেন এবং এ উদ্দেশ্যেই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦﴾ [الذاريات: ٥٦] “আমি জিন্ন ও মানব জাতিকে কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে।” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]‘তারা আমারই ইবাদত করবে’-এর অর্থ, তারা আমার তাওহীদ তথা (রবুবিয়াত ও ইবাদতে) একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করবে। মূলকথা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ আদেশ হচ্ছে ‘তাওহীদ’। আর আল্লাহর সর্ববৃহৎ নির্দেশটি হচ্ছে তাওহীদ। যার অর্থ সর্বপ্রকারের ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। পক্ষান্তরে তাঁর বড় নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে শির্ক। তার অর্থ, আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে আহ্বান করা। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ ﴾ [النساء: ٣٦] “এবং তোমরা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে, অন্য কোনো কিছুকেই তাঁর সঙ্গে শরীক করবে না।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬] [তিনটি মূলনীতি- الأصول الثلاثة]সুতরাং যদি তোমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, সেই তিনটি মূলনীতি কি যা প্রত্যেক মানূষেরই জানা অবশ্য কর্তব্য? তুমি উত্তর দেবে যে, বিষয় তিনটি হলো, প্রত্যেক মানুষ জানবে (১) তার রব সম্পর্কে (২) তাঁর দীন বা জীবন বিধান সম্পর্কে এবং (৩) তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে।الأصل الأول প্রথম মূলনীতি: রব সম্পর্কে জানা যদি তোমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, “তোমার রব কে?” তা হলে বল, সেই মহান আল্লাহ যিনি আমাকে ও অন্যান্য সকল সৃষ্টি জীবকে তাঁর বিশেষ নি‘আমতসমূহ দ্বারা লালন পালন করেন। তিনি আমার একমাত্র মা‘বুদ, তিনি ব্যতীত আমার অন্য কোনো মা‘বুদ নেই। এর প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহর বাণী, ﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢﴾ [الفاتحة: ٢] “যাবতীয় প্রশংসা কেবল আল্লাহরই জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ১]আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই হচ্ছে তাঁর সৃষ্ট বস্তু এবং আমিও সেই সৃষ্ট জগতের একটি অংশ মাত্র। আর যখন তুমি জিজ্ঞাসিত হবে, “তুমি কিসের মাধ্যমে তোমার রবকে চিনেছ?”তখন তুমি উত্তর দেবে, তাঁর নিদর্শনসমূহ ও তাঁর সৃষ্টিরাজির মাধ্যমে (আমি আমার রবকে চিনেছি)। আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবা-রাত্রি, সূর্য-চন্দ্র আর তাঁর সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্যে রয়েছে সাত আকাশ, সাত যমীন এবং যা কিছু তাদের ভিতরে এবং যা কিছু এতদুভয়ের মধ্যস্থলে রয়েছে। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِ ٱلَّيۡلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُۚ لَا تَسۡجُدُواْ لِلشَّمۡسِ وَلَا لِلۡقَمَرِ وَٱسۡجُدُواْۤ لِلَّهِۤ ٱلَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ٣٧﴾ [فصلت: ٣٧] “আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত্রি ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সাজদাহ করবে না, চন্দ্রকেও নয়। বরং সাজদাহ করবে একমাত্র সে আল্লাহকে যিনি ঐ সবকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে থাক।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৭]অনুরূপ আল্লাহর বাণী, ﴿إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤﴾ [الاعراف: ٥٤] “নিশ্চয় তোমাদের রব হচ্ছেন সেই আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনি রজনীর দ্বারা দিবসকে সমাচ্ছন্ন করেন, যে মতে তার ত্বরিৎ গতিতে একে অন্যের অনুসরণ করে চলে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজিকে স্বীয় নির্দেশের অনুগতরূপে। জেনে নাও, সৃষ্টি করার ও হুকুম প্রদানের মালিক তো তিনিই। সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কতই না বরকতময়।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]আর যিনি রব হবেন তিনিই হবেন মা‘বুদ বা উপাস্য। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُمۡ وَٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ٢١ ٱلَّذِي جَعَلَ لَكُمُ ٱلۡأَرۡضَ فِرَٰشٗا وَٱلسَّمَآءَ بِنَآءٗ وَأَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءٗ فَأَخۡرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَٰتِ رِزۡقٗا لَّكُمۡۖ فَلَا تَجۡعَلُواْ لِلَّهِ أَندَادٗا وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٢٢﴾ [البقرة: ٢١، ٢٢] “হে মানুষ! তোমরা ইবাদাত করবে সেই মহান রবের যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও। যিনি তোমাদের জন্যে যমীনকে করেছেন বিছানা স্বরূপ আর আসমানকে করেছেন ছাদ স্বরূপ। আর যিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি নাযিল করেন, অতঃপর এর দ্বারা উদ্গত করেন নানা প্রকার ফলশস্য তোমাদের জীবিকা হিসেবে। অতএব, তোমরা কোনো কিছুকেই আল্লাহর সমকক্ষ তথা অংশীদার করো না, অথচ তোমরা অবগত আছ।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১-২২]ইবন কাসীর বলেছেন, “যিনি এ সব জিনিসের সৃষ্টিকর্তা তিনিই তো ইবাদতের যোগ্য।” [যেসব ইবাদাতের নির্দেশ আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন]যেসব ইবাদতের নির্দেশ আল্লাহ তা‘আলা দিয়েছেন তা হচ্ছে, ১. ইসলাম (পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পন) ২. ঈমান (স্বীকৃতি দেওয়া তথা অন্তর, মুখ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা মেনে নেওয়া) ৩. ইহসান। (সার্বিক সুন্দরতমভাবে যাবতীয় কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা)। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, (ক) الدعاء (আদ-দো‘আ) প্রার্থনা, আহ্বান; (খ) الخوف (আল-খাউফ) ভয়-ভীতি; (গ) الرجاء (আর-রাজা) আশা-আকাঙ্খা; (ঘ) التوكل (আত-তাওয়াক্কুল) নির্ভরশীলতা, ভরসা; (ঙ) الرغبة (আর-রাগবাহ) অনুরাগ, আগ্রহ; (চ) الرهبة (আর-রাহবাহ) শঙ্কা; (ছ) الخشوع (আল-খুশূ‘) বিনয়-নম্রতা; (জ) الخشية (আল-খাশিয়াত) ভীত হওয়া; (ঝ) الإنابة (আল-ইনাবাহ) আল্লাহর অভিমুখী হওয়া, তাঁর দিকে ফিরে আসা; (ঞ) الاستعانة (আল-ইস্তে‘আনাত) সাহায্য প্রার্থনা করা; (ট) الاستعاذة (আল-ইস্তে‘আযা) আশ্রয় প্রার্থনা করা। (ঠ) الاستغاثة (আল-ইস্তেগাসাহ) উদ্ধার প্রার্থনা; (ড) الذبح (আয-যাবহ) যবাই করা; (ঢ) النذر (আন-নযর) মান্নত করা ইত্যাদি। এগুলোসহ আরও যে সব ইবাদতের নির্দেশ আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন, সেগুলো কেবল আল্লাহর জন্যই করতে হবে। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [الجن: ١٨] “আর সাজদাহর স্থানসমূহ একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্ধারিত। অতএব, আল্লাহর সঙ্গে কাউকেই আহ্বান করবে না।” [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]সুতরাং কেউ যদি উপরোক্ত বিষয়ের কোনো একটি কাজ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে সম্পাদন করে তবে সে মুশরিক ও কাফের হিসেবে বিবেচিত হবে। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿وَمَن يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَٰنَ لَهُۥ بِهِۦ فَإِنَّمَا حِسَابُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦٓۚ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ١١٧﴾ [المؤمنون: ١١٧] “যে ব্যক্তি এক আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্যকে আহ্বান করে, তার নিকট তার সমর্থনে কোনই যুক্তি প্রামাণ নেই তার হিসাব-নিকাশ হবে তার রবের কাছে। নিশ্চয় কাফের লোকেরা কখনই সফলকাম হবে না।” [সূরা মুমিনূন, আয়াত: ১১৭]তাছাড়া হাদীসে এসেছে,«الدُّعَاءُ مُخُّ العِبَادَةِ»“দো‘আ বা প্রার্থনা হচ্ছে উবাদতের সারাংশ”।[1] [দো‘আ হচ্ছে ইবাদত।] এর প্রমাণ, আল্লাহর বাণী, ﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠﴾ [غافر: ٦٠] “আর তোমাদের রব বলেন: তোমরা সকলে আমাকেই ডাকবে, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব, যারা আমার ইবাদত করতে অহঙ্কার করে, তারা তো জাহান্নামে প্রবেশ করবে অতিশয় ঘৃণিত অবস্তায়।” [সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]ভয় করা ইবাদত। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿فَلَا تَخَافُوهُمۡ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١٧٥﴾ [ال عمران: ١٧٥] “অতঃপর তোমরা তাদের ভয় করবে না, বরং আমাকেই ভয় করে চলবে, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হয়ে থাক। [সূরা আলে ইমরান: ১৭৫]আশা করা ইবাদত। এর দলীল আল্লাহর বাণী, ﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [الكهف: ١١٠] “অতএব, যে ব্যক্তি তার রবের সাক্ষাৎ লাভের আশা-আকাঙ্খা পোষণ করে, সে যেন সৎ কর্ম করে। আর নিজ রবের ইবাদতে অপর কাউকে শরীক না করে।” [সূরা কাহাফ: ১১০] নির্ভরশীলতা ইবাদত। এর দলীল আল্লাহর বাণী, ﴿وَعَلَى ٱللَّهِ فَتَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ﴾ [المائ‍دة: ٢٣] .“আর তোমরা একমাত্র আল্লাহর ওপরই নির্ভর করবে, যদি তোমরা প্রকৃত মুমিন হও।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ২৩]আল্লাহ আরও বলেছেন,﴿وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓۚ﴾ [الطلاق: ٣] .“আর যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর ওপরই নির্ভরশীল হয়, তার জন্য তিনিই (আল্লাহ) যথেষ্ট।” [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ৩] আগ্রহ, ভয় মিশ্রিত শ্রদ্ধা ও বিনয় ইবাদত হিসেবে বিবেচিত। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী﴿إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗاۖ وَكَانُواْ لَنَا خَٰشِعِينَ﴾ [الانبياء: ٩٠] “নিশ্চয় এরা সৎকর্মে ত্বরিত ও সদা তৎপর ছিল। আর ভক্তি ও ভয় সহকারে আমাকে আহ্বান করতো এবং আমার প্রতি এরা বিনয়-বিনম্র।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৯০]ভীত-শঙ্কিত থাকা ইবাদত। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী,﴿فَلَا تَخۡشَوۡهُمۡ وَٱخۡشَوۡنِي﴾ [البقرة: ١٥٠] “সুতরাং তোমাদের তাদের ভয় করো না, একমাত্র আমাকেই ভয় করে চল।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫০]নৈকট্যলাভের কামনা এবং কৃত পাপের জন্যে অনুশোচনা ইবাদত। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُۥ﴾ [الزمر: ٥٤] “আর তোমরা সকলে স্বীয় রবের পানে ফিরে এসো এবং তাঁরই নিকট সর্বতোভাবে আত্মসমর্পণ কর।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৪]সাহায্য প্রার্থনা ইবাদত হিসেবে পরিগণিত: এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥﴾ [الفاتحة: ٥] “(হে আমাদের রব), আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি আর একমাত্র তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৪]আর হাদীসে এসেছে,«وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ».“যখন তুমি সাহায্য চাইবে তখন একমাত্র আল্লাহর নিকটেই তা (বিনম্রভাবে) চাইবে।”[2]আশ্রয় চাওয়া ইবাদত হিসেবে পরিগণিত। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ ١ مَلِكِ ٱلنَّاسِ ٢﴾ [الناس: ١، ٢] “বল, আমি মানুষের রব ও মানুষের অধিপতির নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” [সূরা আন-নাস, আয়াত: ১,২] উদ্ধার কামনা করা ইবাদত হিসেবে পরিগণিত। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿إِذۡ تَسۡتَغِيثُونَ رَبَّكُمۡ فَٱسۡتَجَابَ لَكُمۡ﴾ [الانفال: ٩] “আরও (স্মরণ কর) যখন তোমরা তোমাদের রবের কাছে উদ্ধারের জন্য আবেদন জানিয়েছিলে তখন তিনি তোমাদের আবেদনে সাড়া দিলেন (কবুল করলেন)”। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৯]জবেহ করাও ইবাদত: এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣﴾ [الانعام: ١٦٢، ١٦٣] “(হে রাসূল) বলে দাও, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর জন্যই। তাঁর কোনোই শরীক নেই এবং আমি এ জন্য আদিষ্ট আর আমিই হচ্ছি মুসলিমদের অগ্রণী”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬২-১৬৩]হাদীসে এসেছে,«لَعَنَ اللهُ مَن ذَبَحَ لِغَيرِ اللهِ».“যারা অপরের নামে যবেহ করে আল্লাহ তাদের অভিশাপ দেন।”[3]মান্নত পূর্ণ করাও ইবাদত। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿يُوفُونَ بِٱلنَّذۡرِ وَيَخَافُونَ يَوۡمٗا كَانَ شَرُّهُۥ مُسۡتَطِيرٗا ٧﴾ [الانسان: ٧] “তারা অঙ্গীকার পূরণ করে আর সেদিনকে (কিয়ামত দিবসকে) ভয় করে, যে দিনের বিপদ-আপদ হবে সর্বব্যাপী ও সর্বগ্রাসী।” [সূরা আদ-দাহার, আয়াত: ৭]الأصل الثاني দ্বিতীয় মূলনীতি: প্রমানাদিসহ ইসলাম সম্পর্কে জানা আর দীন-ইসলাম হচ্ছে, তাওহীদ বা এক-অদ্বিতীয় আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্ম-সমর্পণ, অকুণ্ঠ নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর আনুগত্য বরণ এবং শির্ক থেকে মুক্ত থাকা। বস্তুত দীনের রয়েছে তিনটি পর্যায়, (ক) ইসলাম, (খ) ঈমান ও (গ) ইহসান।المرتبة الأولى প্রথম পর্যায়: ইসলামইসলামের রুকন বা স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি:১) ‘আল্লাহ ব্যতীত নেই কোনো হক্ব মা‘বুদ এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসূল’- একথার সাক্ষ্য প্রদান করা।২) সালাত সুপ্রতিষ্ঠিত করা।৩) যাকাত প্রদান করা।৪) রামাযান মাসের সাওম পালন করা।৫) আল্লাহর ঘর হজ করা।[ইসলামের রুকনসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা]প্রথম রুকন: কালেমায়ে শাহাদাত এর পক্ষে প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহর বাণী,﴿شَهِدَ ٱللَّهُ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَأُوْلُواْ ٱلۡعِلۡمِ قَآئِمَۢا بِٱلۡقِسۡطِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١٨﴾ [ال عمران: ١٨] “আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, একমাত্র তিনি ব্যতীত সত্যিকার কোনো উপাস্য নেই। আর ফিরিশতাবৃন্দ এবং জ্ঞানবান ব্যক্তিগণও ন্যায়নিষ্ঠ হয়ে ঘোষণা করেন যে, মহাপরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোনো উপাস্য নেই।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮]এর অর্থ হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে একমাত্র তিনি আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইবাদতের যোগ্য ইলাহ নেই। এর দু’টি দিক রয়েছে, একটি নেতিবাচক, অপরটি ইতিবাচক। নেতিবাচক দিকটি হচ্ছে, ‘কোনোই মা‘বুদ নেই’ এর দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্য যা কিছুর ইবাদত করা হয় তা সম্পূর্ণরূপে নাকচ করা হয়েছে। আর ইতিবাচক দিক হচ্ছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত’ এর দ্বারা ইবাদত দৃঢ়তার সঙ্গে একমাত্র আল্লাহ’র জন্যই সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাঁর রাজত্বে যেমন কোনো অংশীদার নেই, তেমনি তাঁর ইবাদত ক্ষেত্রেও কোনো অংশীদার থাকতে পারে না। এ তাওহীদ বা একত্ববাদের তাফসীর ও ব্যাখ্যা এসেছে আল্লাহর বাণী কুরআনে। যেমন, আল্লাহর বাণী, ﴿وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِيمُ لِأَبِيهِ وَقَوۡمِهِۦٓ إِنَّنِي بَرَآءٞ مِّمَّا تَعۡبُدُونَ ٢٦ إِلَّا ٱلَّذِي فَطَرَنِي فَإِنَّهُۥ سَيَهۡدِينِ ٢٧ وَجَعَلَهَا كَلِمَةَۢ بَاقِيَةٗ فِي عَقِبِهِۦ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٢٨﴾ [الزخرف: ٢٦، ٢٨] “আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম নিজ পিতা ও নিজ সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমরা যে সব মূর্তির পূজা অর্চনা করছ আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, আমি তাঁরই ইবাদত করি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আর তিনিই আমাকে সৎ পথে পরিচালিত করবেন এবং ইবরাহীম এক চিরন্তন কালেমারূপে রেখে গেছেন তাঁর পরবর্তীদের জন্যে, যাতে তারা সেই বাণীর পানে ফিরে যেতে পারে। [সূরা আয-যুখরূফ, আয়াত: ২৬-২৮]অনুরূপ আল্লাহর অপর বাণী,  ﴿قُلۡ يَٰٓأَهۡلَ ٱلۡكِتَٰبِ تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ كَلِمَةٖ سَوَآءِۢ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ أَلَّا نَعۡبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشۡرِكَ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يَتَّخِذَ بَعۡضُنَا بَعۡضًا أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِۚ فَإِن تَوَلَّوۡاْ فَقُولُواْ ٱشۡهَدُواْ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٦٤﴾ [ال عمران: ٦٤] “বল, হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন এক বাণীর প্রতি আস যা আমাদের ও তোমাদের মাঝে সমান। আর তা হচ্ছে, আমরা আল্লাহ ব্যতীত আর কারো ইবাদত করবো না, আমরা কোনো কিছুই তাঁর শরীক করব না। আর আমরা আল্লাহকে ছেড়ে একে অপরকে কস্মিনকালেও রব বলে গ্রহণ করব না, কিন্তু তারা যদি এতে পরাম্মুখ হয়, তাহলে তোমরা (আহলে কিতাবদের) বলে দাও, জেনে রাখো, আমরা হচ্ছি আল্লাহতে আত্মসমর্পিত মুসলিম।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৪]আর ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ এ সাক্ষ্যের স্বপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহর বাণী, ﴿ لَقَدۡ جَآءَكُمۡ رَسُولٞ مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ عَزِيزٌ عَلَيۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِيصٌ عَلَيۡكُم بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ ١٢٨﴾ [التوبة: ١٢٨] “অবশ্যই তোমাদের কাছে সমাগত হয়েছেন তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল যাঁর পক্ষে দূর্বহ ও অসহনীয় হয়ে থাকে তোমাদের দুঃখকষ্টগুলো, যিনি তোমাদের প্রতি সদা সচেতন। মুমিনদের প্রতি যিনি চির স্নেহশীল ও দয়াবান।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১২৮]আর ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ এ কথার তাৎপর্য হচ্ছে, ১. তিনি যা আদেশ করেছেন তা অনূসরণ করা।২. তিনি যে বিষয়ের সংবাদ প্রদান করেছেন তা সত্য বলে স্বীকার করা।৩. তিনি যা থেকে নিষেধ করেন তা বর্জন করা এবং ৪. কেবল তাঁর প্রবর্তিত শরী‘আত অনুযায়ীই আল্লাহর ইবাদত করা।[দ্বিতীয় ও তৃতীয় রুকন সালাত, যাকাত সম্পর্কে ব্যাখ্যা]আর সালাত, যাকাতের প্রমাণ এবং তাওহীদের ব্যাখ্যা সম্পর্কে আল্লাহর বাণী, ﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥﴾ [البينة: ٥] “আর তাদের তো কেবল এ আদেশই দেওয়া হয়েছিল যে, তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে দীন ইসলামকে খালেস করে নিবে কেবল আল্লাহর জন্য। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে। আর এটাই হচ্ছে সুদৃঢ় দীন।” [সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৫][চতুর্থ রুকন সাওমের ব্যাখ্যা]সাওমের প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহর বাণী, ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [البقرة: ١٨٣]“হে ঈমানদারগণ, সিয়াম সাধনা তোমাদের ওপর ফরয করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩][পঞ্চম রুকন সম্পর্কে ব্যাখ্যা]হজের প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহর বাণী, ﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ [ال عمران: ٩٧] “আর আল্লাহর ঘরের উদ্দেশ্যে সফরের সামর্থ রাখে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে কা’বাগৃহের হজ করা ফরয, কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি এ আদেশ অমান্য করে তা হলে (জেনে রাখ) আল্লাহ সৃষ্টিকুল থেকেই অমুখাপেক্ষী।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]المرتبة الثانية দ্বিতীয় পর্যায় : ঈমানঈমানের শাখা-প্রশাখা সত্তরেরও অধিক। এর মধ্যে সর্বোচ্চ হচ্ছে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুখে উচ্চারণ করা। আর সর্বনিম্ন হচ্ছে পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূরে সরিয়ে দেয়া, আর লজ্জাশীলতা হচ্ছে, ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে একটি শাখা।তবে ঈমানের রুকন বা স্তম্ভ হচ্ছে ছয়টি: (১) আল্লাহর ওপর ঈমান। (২) ফিরেশতাগণের ওপর ঈমান। (৩) আসমানী কিতাবসমূহের ওপর ঈমান। (৪) রাসূলগণের ওপর ঈমান। (৫) শেষ দিবসের ওপর ঈমান। (৬) তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান।এ ছয়টি রুকনের দলীল হচ্ছে, আল্লাহর বাণী, ﴿لَّيۡسَ ٱلۡبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ قِبَلَ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلۡكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ﴾ [البقرة: ١٧٧] “তোমরা পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে মুখ ফিরাবে এতে কোনোই পূণ্য ও কল্যাণ নেই; বরং পূণ্য হচ্ছে যে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফিরিশতাকুল, কিতাবসমূহ ও নবীগণের ওপর ঈমান আনয়ন করে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৭]আর তাকদীর এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী, ﴿إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [القمر: ٤٩] “নিশ্চয় আমরা প্রতিটি জিনিসের তাকদীর নির্ধারণ করে সৃষ্টি করেছি।” [সূরা আল-ক্বামার, আয়াত: ৪৯]المرتبة الثالثة তৃতীয় পর্যায় : ইহসানইহসান-এর স্তম্ভ মাত্র একটি, আর তা হচ্ছে,‘আল্লাহর ইবাদত করার সময় তুমি যেন তাকে দেখতে পাচ্ছ এটা মনে করা, আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও তবে এ কথা মনে করে নেওয়া যে, নিশ্চয় তিনি তোমাকে দেখছেন।’ইহসানের প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহর বাণী, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَواْ وَّٱلَّذِينَ هُم مُّحۡسِنُونَ ١٢٨﴾ [النحل: ١٢٨] “নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ও ইহসান অবলম্বন করে, আল্লাহ (জ্ঞানে এবং সাহায্য-সহযোগিতায়) তাদের সঙ্গে রয়েছেন।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১২৮]অনুরূপ আল্লাহর বাণী,﴿وَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱلۡعَزِيزِ ٱلرَّحِيمِ ٢١٧ ٱلَّذِي يَرَىٰكَ حِينَ تَقُومُ ٢١٨ وَتَقَلُّبَكَ فِي ٱلسَّٰجِدِينَ ٢١٩ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٢٢٠﴾ [الشعراء: ٢١٧، ٢٢٠] “আর ভরসা কর সেই পরাক্রান্ত ও দয়াবানের ওপর, যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি সালাতে দাঁড়াও আর যখন তুমি সালাত আদায়কারীদের সঙ্গে উাঠাবসা কর। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২১৭-২২০]তদ্রূপ আল্লাহর অপর বাণী,﴿وَمَا تَكُونُ فِي شَأۡنٖ وَمَا تَتۡلُواْ مِنۡهُ مِن قُرۡءَانٖ وَلَا تَعۡمَلُونَ مِنۡ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيۡكُمۡ شُهُودًا إِذۡ تُفِيضُونَ فِيهِۚ﴾ [يونس: ٦١] “এবং তুমি (হে রাসূল) যে কোনো পরিস্থিতির মধ্যে অবস্থান কর না কেন, আর তা সম্পর্কে কুরআন থেকে যা কিছু তিলাওয়াত কর না কেন এবং তোমরা যে কোনো কর্ম সম্পাদন কর না কেন আমরা সে সবের পূর্ণ পর্যবেক্ষক হয়ে থাকি; যখন তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৬১]এ-সম্পর্কে হাদীসের প্রমাণ হচ্ছে, জিবরীল ‘আলাইহিস সালামের এ সুপ্রসিদ্ধ হাদীস যা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম এমতাবস্থায় সেখানে মিশমিশে কাল কেশ, ধবধবে সাদা পোষাক পরিহিত একজন মানুষ এসে উপস্থিত হলেন। ভ্রমণের কোনো নিদর্শনই তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল না, অথচ আমরা কেউ তাকে চিনতে পারি নি। অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে হাঁটু গেড়ে বসলেন এবং হস্তদ্বয় তাঁর উরুদেশে রাখলেন, এরপর বললেন, হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে সংবাদ প্রদান করুন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হচ্ছে, এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সালাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসূল। সালাত প্রতিষ্ঠা করা। যাকাত প্রদান করা রমযান মাসের সাওম পালন করা এবং সামর্থ্য থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ করা। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিক বলেছেন। এতে আমরা আশ্চর্য হলাম যে, তিনি নিজেই জিজ্ঞেস করছেন আবার নিজেই তার সত্যায়ন করছেন। অতঃপর তিনি বললেন: আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (ঈমান হলো) আল্লাহ, ফিরিশতাকুল, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, শেষ দিবস এবং তাকদীরের ভালো-মন্দের ওপর ঈমান আনয়ন করা। এরপর আগন্তুক বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে সংবাদ দিন। উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তুমি ইবাদতে লিপ্ত হবে, তখন তুমি যেন আল্লাহকে দেখছ এ কথা মনে করতে হবে, আর যদি এটা সম্ভব নাও হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।অতঃপর আগন্তুক বললেন, “আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন” নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা অধিক জানে না।এরপর আগন্তুক বললেন, তাহলে আমাকে কিয়ামতের নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে জানান। তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন,যখন পরিচারিকা স্বীয় মালিকের জন্ম দেবে, নগ্নদেহ ও নগ্ন পদ বিশিষ্ট ও জীর্ণ-শীর্ণ পোষাক পরিহিত ছাগলের রাখালরা সুউচ্চ অট্টালিকায় বসবাস করবে।হাদীস বর্ণনাকারী বললেন, আগন্তুক পরক্ষণেই প্রস্থান করলেন। এরপর আমরা কিছুক্ষণ নীরব নিস্তব্ধ থাকলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উমার, তুমি কি জান প্রশ্নকারী কে ছিলেন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি হচ্ছেন জিবরীল, তিনি তোমাদেরকে দীন শিক্ষা প্রদানার্থে তোমাদের কাছে এসেছিলেন।’[4]الأصل الثالث তৃতীয় মূলনীতি: নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানাতৃতীয় মূলনীতি হচ্ছে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা। তিনি হচ্ছেন, মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ তথা আবদুল্লাহর পুত্র, তাঁর পিতা আবদুল মুত্তালিব, তাঁর পিতা হাশেম। হাশেম কুরাইশ বংশের লোক এবং এটি আরব কাওম ও গোষ্ঠীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী ইবরাহীম খলীলুল্লাহর পুত্র ইসলাইলের বংশ হতে উদ্ভুত। (তার ওপর এবং আমাদের নবীর ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক)। তিনি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তেষট্টি (৬৩) বছর জীবিত ছিলেন, নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে চল্লিশ বছর এবং “নবী ও রাসূল” হিসেবে তেইশ বছর (অতিবাহিত করেছেন)।তাকে সূরা “ইকরা” নাযিল করার মাধ্যমে নবী এবং সূরা মুদ্দাসসির নাযিল করার মাধ্যমে রাসূল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শির্ক থেকে সতর্ক করার জন্যে এবং তাওহীদ তথা অদ্বিতীয় আল্লাহর একত্ববাদ প্রচারের জন্য আল্লাহ তাঁকে প্রেরণ করেন। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمُدَّثِّرُ ١ قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢ وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤ وَٱلرُّجۡزَ فَٱهۡجُرۡ ٥ وَلَا تَمۡنُن تَسۡتَكۡثِرُ ٦ وَلِرَبِّكَ فَٱصۡبِرۡ ٧﴾ [المدثر: ١، ٧] “হে কম্বলে দেহ আবৃতকারী। উঠে দাঁড়াও, সকলকে সতর্ক কর ও নিজ রবর মহিমা ঘোষণা কর। বস্ত্রসমূহ পাক-সাফ রাখ, শির্কের কদর্যতাকে সম্পূর্ণ বর্জন কর, বিনিময় লাভের আশায় ইহসান করো না। আর নিজ প্রভূর (আদেশ পালনে) ধৈর্য ধারণ কর। [সূরা আল- মুদ্দাসসির, আয়াত: ১-৭]এখানে ﴿قُمۡ فَأَنذِرۡ ٢﴾ [المدثر: ٢] “উঠে দাঁড়াও ও সতর্ক কর” এর অর্থ, শির্কের বিরুদ্ধে সতর্ক কর এবং তাওহীদের প্রতি আহ্বান জানাও।﴿وَرَبَّكَ فَكَبِّرۡ ٣﴾ [المدثر: ٣] “আর তোমার রবের মহিমা ঘোষণা কর” এর অর্থ তাওহীদের মাধ্যমে আল্লাহর মাহাত্ম্য প্রচার কর।﴿ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرۡ ٤ ﴾ [المدثر: ٤] “আর তোমার পোষাক পরিচ্ছদ পাক-সাফ রাখ” এর অর্থ “আমলসমূহ”কে শির্কের কলুষ-কালিমা থেকে পবিত্র রাখ।﴿ وَٱلرُّجۡزَ فَٱهۡجُرۡ ٥ ﴾ [المدثر: ٥] “আর কদর্যতা বর্জন কর” এর মধ্যে ‘রুজয’ এর অর্থ প্রতিমা আর ‘হাজর’ এর অর্থ ছেড়ে দেওয়া। সুতরাং আয়াতের পূর্ণ অর্থ হচ্ছে, প্রতিমা পূজা ও পূজকদের ত্যাগ করা, প্রতিমা থেকে সম্পর্কচ্ছুতি এবং পূজকদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে দূরে বহু দূরে অবস্থান করা। তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দশ বছর ধরে এ তাওহীদের দিকেই মানুষদের আহ্বান জানিয়েছেন। তারপর তাকে আসমানে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। অতঃপর মক্কা ভূমিতে তিন বছর উক্ত সালাত সূচারুরূপে সম্পাদনের পর মদীনায় হিজরত করার আদেশপ্রাপ্ত হন।হিজরতের অর্থ শির্ক-কলুষিত স্থান পরিত্যাগ করে ইসলামী রাজ্যে গমন করা। এ উম্মতের (উম্মতে মুহাম্মাদীয়া) জন্য শির্ক-কলুষিত স্থান থেকে ইসলামী রাজত্বে হিজরত করা ফরয। এ হিজরত কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষুন্ন ও অব্যাহত থাকবে।এর সপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী,﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ تَوَفَّىٰهُمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ ظَالِمِيٓ أَنفُسِهِمۡ قَالُواْ فِيمَ كُنتُمۡۖ قَالُواْ كُنَّا مُسۡتَضۡعَفِينَ فِي ٱلۡأَرۡضِۚ قَالُوٓاْ أَلَمۡ تَكُنۡ أَرۡضُ ٱللَّهِ وَٰسِعَةٗ فَتُهَاجِرُواْ فِيهَاۚ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا ٩٧ إِلَّا ٱلۡمُسۡتَضۡعَفِينَ مِنَ ٱلرِّجَالِ وَٱلنِّسَآءِ وَٱلۡوِلۡدَٰنِ لَا يَسۡتَطِيعُونَ حِيلَةٗ وَلَا يَهۡتَدُونَ سَبِيلٗا ٩٨ فَأُوْلَٰٓئِكَ عَسَى ٱللَّهُ أَن يَعۡفُوَ عَنۡهُمۡۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَفُوًّا غَفُورٗا ٩٩﴾ [النساء: ٩٧، ٩٩] “নিশ্চয় যারা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছে, তাদের ‘জান কবয’ করার সময় ফিরিশতাগণ বলবে, কি অবস্থায় তোমরা ছিলে? তারা বলবে, আমরা মাটির পৃথিবীতে ছিলাম অসহায় অবস্থায়। ফিরিশতাকূল বলবেন: আল্লাহর দুনিয়া কি এতটা প্রশস্ত ছিল না, যাতে তোমরা হিজরত করতে পারতে? অতএব, এরা হচ্ছে সেই সব লোক যাদের শেষ আশ্রয় হবে জাহান্নাম। আর এ হচ্ছে নিকৃষ্টতম আশ্রয়স্থল। কিন্ত যেসব আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা এমনভাবে অসহায় হয়ে পড়ে যে, কোনো উপায় উদ্ভাবন করতে তারা সমর্থ হয় না, এমন কি পথ সম্পর্কেও তারা কোনো সহায় সম্বল খুঁজে পায় না, এদের আল্লাহ ক্ষমার আশ্বাস দিচ্ছেন, বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাশীল ও পাপ মোচনকারী”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৯৭-৯৯]অনুরূপ আল্লাহর বাণী, ﴿يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّ أَرۡضِي وَٰسِعَةٞ فَإِيَّٰيَ فَٱعۡبُدُونِ ٥٦﴾ [العنكبوت: ٥٦] “হে আমার মুমিন বান্দাগণ! নিশ্চয় আমার যমীন প্রশস্ত। অতএব, তোমরা একমাত্র আমারই বান্দেগী করতে থাক” [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৫৬]ইমাম বাগাভী রহ. বলেন, “এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ এই যে, যে সব মুসলিম হিজরত না করে মক্কায় রয়েছে, আল্লাহ তাদের ঈমানের সম্বোধন করে আহ্বান করেছেন।”হিজরতের সমর্থনে হাদীস থেকে প্রমাণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী,«لَا تَنْقَطِعُ الْهِجْرَةُ حَتَّى تَنْقَطِعَ التَّوْبَةُ، وَلَا تَنْقَطِعُ التَّوْبَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا»“তাওবা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত হিজরত বন্ধ হবে না আর সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত না হওয়া পর্যন্ত তওবার দ্বারও বন্ধ হবে না।”[5]অতঃপর যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় অবস্থান সম্পন্ন করেন তখন অন্যান্য আদেশগুলো প্রাপ্ত হন; যথা যাকাত, সাওম, হজ, আযান, জিহাদ, ভালো কাজের আদেশ, মন্দ কাজের নিষেধ ইত্যাদি ইসলামী শরী‘আতের বিধানসমূহ।হিজরতের পরের দশ বছর তিনি মদীনায় অতিবাহিত করেন। এরপর তিনি মারা যান (আল্লাহর যাবতীয় সালাত ও সালাম তার ওপর অজস্র ধারায় বর্ষিত হোক) এমতাবস্থায় যে, তাঁর প্রচারিত দীন তখন বর্তমান ছিল, আর এখনও যে দীন রয়েছে সেটা তাঁরই। তিনি তাঁর উম্মতকে যাবতীয় সৎকর্ম সম্পর্কে অবহিত করেন আর যাবতীয় অপকর্ম সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। সর্বোত্তম যে পথ তিনি দেখিয়ে গেছেন তা হচ্ছে তাওহীদের পথ, আর দেখিয়েছেন সেই পথ যা আল্লাহর নিকট প্রিয় এবং তাঁর পছন্দনীয়। পক্ষান্তরে সর্ব নিকৃষ্ট বস্তু যা থেকে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন তা’ হচ্ছে শির্ক এবং এমন সব কাজ যা আল্লাহ অপছন্দ করেন।আল্লাহ নবী (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এই নিখিল ধরণীর সকল মানুষের নিকট প্রেরণ করেছেন এবং সকল জিন্ন ও মানুষের পক্ষে তার আনুগত্য অপরিহার্য করে দিয়েছেন। এর প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহর বাণী, ﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾“বল (হে নবী) হে মানুষ, আমি (আল্লাহ কর্তৃক) তোমাদের সকলের জন্য প্রেরিত রাসূল।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৮]মহান আল্লাহ স্বীয় নবীর মাধ্যমে তাঁর এই দীনকে পূর্ণতা প্রদান করেছেন। এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী, ﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [المائ‍دة: ٣] “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম, তোমাদের ওপর আমার নি‘আমতকে সুসম্পন্ন করলাম আর ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মারা গেছেন তার প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿إِنَّكَ مَيِّتٞ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ ٣٠ ثُمَّ إِنَّكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ عِندَ رَبِّكُمۡ تَخۡتَصِمُونَ ٣١﴾ [الزمر: ٣٠، ٣١] “(হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমার মৃত্যু হবে এবং তাদেরকেও মরতে হবে। তারপর তোমরা সকলে তোমাদের রবের নিকটে বিবাদ বিসম্বাদ করবে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩১-৩২]আর মানুষ যখন মারা যাবে, তখন তাকে অবশ্যই (কিয়ামতের দিন) পুনরুত্থিত করা হবে। এর প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী, ﴿مِنۡهَا خَلَقۡنَٰكُمۡ وَفِيهَا نُعِيدُكُمۡ وَمِنۡهَا نُخۡرِجُكُمۡ تَارَةً أُخۡرَىٰ ٥٥﴾ [طه: ٥٥] “আমরা তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছি আর তার মাধ্যেই তোমাদের প্রত্যাবর্তিত করব এবং তার থেকেই একদিন আবার তোমাদেরকে বের করে আনব।” [সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৫৫]আল্লাহর অপর বাণী,﴿وَٱللَّهُ أَنۢبَتَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ نَبَاتٗا ١٧ ثُمَّ يُعِيدُكُمۡ فِيهَا وَيُخۡرِجُكُمۡ إِخۡرَاجٗا ١٨﴾ [نوح: ١٧، ١٨] “আল্লাহ তোমাদের যমীন হতে উদ্ভুত করেছেন এক বিশেষ প্রণালীতে। এরপর তিনি তোমাদেরকে আবার তাতে প্রত্যাবর্তিত করাবেন এবং (এর মধ্য থেকে) বের করবেন যথাযথভাবে।” [সূরা নূহ, আয়াত: ১৭-১৮]আর পুনরুত্থানের পর প্রত্যেক (জিন্ন ও ইনসান) থেকে তার কর্মকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব-নিকেশ নেওয়া হবে এবং তাদের আমল অনুযায়ী পুরস্কার অথবা শাস্তি প্রদান করা হবে। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿وَلِلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ لِيَجۡزِيَ ٱلَّذِينَ أَسَٰٓـُٔواْ بِمَا عَمِلُواْ وَيَجۡزِيَ ٱلَّذِينَ أَحۡسَنُواْ بِٱلۡحُسۡنَى ٣١﴾ [النجم: ٣١] “আর নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে অবস্থিত সব কিছু একমাত্র আল্লাহরই। যাতে তিনি দুষ্কর্মকারীদেরকে তাদের কর্মানুসারে উপযুক্ত প্রতিফল প্রদান করেন, পক্ষান্তরে যারা ইহসান (যথাযথভাবে সুচারুরূপে সম্পন্ন) করেছে তাদেরকে পুণ্যফল দিবেন জান্নাতের মাধ্যমে।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩১]আর যারা পুনরুত্থান দিবসে মিথ্যারোপ করে, তারা কাফের। এর প্রমাণ মহান আল্লাহর বাণী, ﴿زَعَمَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ أَن لَّن يُبۡعَثُواْۚ قُلۡ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتُبۡعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلۡتُمۡۚ وَذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧﴾ [التغابن: ٧] “কাফেররা মনে করে যে, তাদের পুনরুত্থিত করা হবে না। (হে রাসূল), তুমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দাও, অবশ্যই হাঁ, আমার রবের শপথ, নিশ্চয় তোমাদের উত্থিত করা হবে, তখন তোমাদের জ্ঞাত করানো হবে, আর আল্লাহর নিকট এ কাজ অতি সহজ।” [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ৭]আল্লাহ তা‘আলা সব নবীদের প্রেরণ করেছেন জান্নাতের শুভ সংবাদ প্রদানার্থে আর জাহান্নাম থেকে সতর্ক করার জন্য। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ﴿رُّسُلٗا مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى ٱللَّهِ حُجَّةُۢ بَعۡدَ ٱلرُّسُلِۚ﴾ [النساء: ١٦٥] “এই রাসূলগণকে (আমরা প্রেরণ করেছিলাম) সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে যেন রাসূলগণের আগমনের পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানবকূলের পক্ষে কৈফিয়ত দেওয়ার মতো কিছুই না থাকে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৫]রাসূলদের মধ্যে নূহ ‘আলাইহিসসালাম প্রথম আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ। আর তিনি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দ্বারাই নবী-রাসূল প্রেরণের ধারা সমাপ্ত হয়েছে। নূহ ‘আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম রাসূল। এর প্রমাণ, আল্লাহর বাণী, ﴿إِنَّآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ كَمَآ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ نُوحٖ وَٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ مِنۢ بَعۡدِهِۦۚ﴾ [النساء: ١٦٣] “নিশ্চয় আমরা অহী প্রেরণ করেছি তোমার প্রতি যেমন অহী প্রেরণ করেছিলাম নূহের প্রতি ও তাঁর পরবর্তী নবীগণের প্রতি”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৬৩]নূহ ‘আলাইহিসসালাম থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত যত জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদের প্রত্যেকেই তাদের উম্মতদের নির্দেশ দিতেন একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে এবং তাগুতের পূজা থেকে বিরত থাকতে। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾“আর অবশ্যই আমরা প্রত্যেক উম্মতের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি যেন তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং সকল প্রকার তাগুতকে পরিহার কর।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৩৬]আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষের ওপর তাগুতকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনয়ন করা ফরয করে দিয়েছেন। ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, “তাগুত” বলতে এমন কিছুকে বুঝায়, কোনো বান্দা যাকে নিয়ে (দাসত্বের) সীমা অতিক্রম করেছে; হতে পারে তা কোনো উপাস্য অথবা অনুসৃত ব্যক্তি অথবা আনুগত্যকৃত সত্তা। বস্তুত তাগুতের সংখ্যা অনেক। তবে এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে পাঁচটি: (১) শয়তান (তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ নিপতিত হোক)।(২) যার উপাসনা করা হয় এবং সে উক্ত উপাসনায় সম্মত।(৩) যে নিজের উপাসনার দিকে মানুষদের আহ্বান জানায়।(৪) যে ব্যক্তি গায়েবী জ্ঞান আছে বলে দাবী করে।(৫) যে ব্যক্তি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত বিচার ফয়সালা করে। এর প্র্রমাণ আল্লাহর বাণী, ﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشۡدُ مِنَ ٱلۡغَيِّۚ فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٥٦﴾ [البقرة: ٢٥٦] “দীন গ্রহণের ব্যাপারে কোনো প্রকার জবরদস্তি বা বল প্রয়োগ নেই। নিশ্চয় হিদায়াত থেকে বিভ্রান্তি স্পষ্টরূপে পৃথক হয়ে গেছে। তাই যে ব্যক্তি “তাগুতকে” অমান্য করল এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনল, নিশ্চয় সে এমন একটি সুদৃঢ় বন্ধন বা অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরল যা কোনো দিন ছিন্ন হবার নয়। বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৬]এটাই হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ ও তাৎপর্য। আর হাদীসে এসেছে,«رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلَامُ، وَعَمُودُهُ الصَّلَاةُ، وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الجِهَادُ»“দীনের শীর্ষে রয়েছে ইসলাম, এর স্তম্ভ হচ্ছে সালাত, আর এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জিহাদ”[6]।আর আল্লাহই হচ্ছেন সর্বজ্ঞ।—™তুমি আল্লাহকে জেনেছ? তার দীনকে? রিসালাত নিয়ে যিনি প্রেরিত হয়েছেন তোমাদের নিকট, চেন তাকে? পরজগতের দীর্ঘ সফরের সূচনায় ব্যক্তি সর্বপ্রথম যে বাস্তবতার মুখোমুখী হবে, তা এই তিনটি প্রশ্ন ও তার উত্তর। প্রশ্নগুলো কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ইসলামের তিন মূলনীতি।[1] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৩৭১, তবে তার সনদ দুর্বল। এর সমর্থনে সহীহ হাদীস হচ্ছে, «الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ» “দো‘আই হচ্ছে ইবাদাত”। যা তিরমিযী, হাদীস নং ৩৩৭২ বর্ণনা করেছেন।   [2] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫১৬; মুসনাদে আহমাদ ১/২৯৩; হাদীস নং ২৬৬৯। [3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৮। [4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০। [5] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৭৯। [6] তিরমিযী, হাদীস নং ২৬১৬।

المرفقات

2

তিনটি মূলনীতি ও তার প্রমাণপঞ্জি
তিনটি মূলনীতি ও তার প্রমাণপঞ্জি