التواب
التوبةُ هي الرجوع عن الذَّنب، و(التَّوَّاب) اسمٌ من أسماء الله...
আবূ উমামা সুদাই ইবন ‘আজলান আল-বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “তোমরা তোমাদের রব আল্লাহ তা‘আলার তাকওয়া অবলম্বন কর, তোমাদের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় কর। তোমাদের রামযান মাসের সাওম পালন কর, তোমাদের ধন-দৌলতের যাকাত আদায় কর এবং তোমাদের প্রশাসকগণের আনুগত্য কর, এতেই তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
যেসব হাদীস আল্লাহর আদেশ মান্য করা ও তাঁর নিষেধকৃত বস্তু থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাঁর তাকওয়া অবলম্বনে উৎসাহিত করা হয়েছে এ হাদীসটি সেসব হাদীসের অন্যতম। এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায় হজের ভাষণে প্রদত্ত বাগ্মিতাপূর্ণ ভাষণ যাতে তিনি অনেক উপদেশ ও নসীহত করেছেন। সেসব উপদেশের মধ্যে অন্যতম ছিল আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন। যেহেতু তিনি বলেছেন, “হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রব আল্লাহ তা‘আলার তাকওয়া অবলম্বন কর।” আর এটি ছিল সে রকমই ভাষ্য যাতে আল্লাহ বলেছেন, “হে মানবকুল! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১) সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত মানুষকে তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে অগণিত নি‘আমত দান করেছেন। অন্য হাদীসে আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অসিয়াত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি অবশ্যই আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করবে। কেননা তাকওয়া সমস্ত কল্যাণের সমষ্টি”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “জান্নাতে যা মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করাবে তা হলো আল্লাহর তাকওয়া ও সচ্চরিত্র”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, “তোমরা তোমাদের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে” অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে তোমাদের ওপর যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন তা আদায় করবে। কেননা কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, “তোমরা তোমাদের রমযান মাসের সাওম পালন করবে”। “তোমাদের মাস” বলে উম্মাতের সাথে মাসকে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে; কেননা জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও অসংখ্য সাওয়াব দানের মতো নি‘আমতরাজি, রহমত ও দয়া তাদের ওপর এ মাসেই তিনি বর্ষণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, “তোমরা তোমাদের সম্পদের যাকাত আদায় করো”। যাকাতের হকদারকে যাকাত দাও, তোমরা কৃপণতা করো না। উক্ত হাদীসে ইসলামের তিনটি রুকন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু হজের কথা উল্লেখ করা হয় নি। কেননা এসব আমল প্রতিদিন বা বছরান্তে বারবার ঘুরে আসে। তাই এগুলো আদায় করা তুলনামূলক কঠিন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলোর আদেশ দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে উপদেশ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, “তোমরা তোমাদের প্রশাসকদের আনুগত্য করবে” অর্থাৎ খলীফা, বাদশা, রাষ্ট্রপ্রধান এবং যারা দায়িত্বে থাকবে তাদের আনুগত্য করবে অথবা এখানে “আমীর” দ্বারা উদ্দেশ্য আলিমগণ। কিংবা এ কথার আরো ব্যাপক অর্থও হতে পারে অর্থাৎ যারাই তোমাদের যে কোনো দায়িত্বে আছেন তাদের আনুগত্য করবে। যদিও সে অত্যাচারী ও অহংকারী শাসক হোক। তবে স্রষ্টার নাফরমানী হয় এমন কাজে সৃষ্টিকুলের আনুগত্য করা যাবে না। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি তোমাদেরকে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করতে উপদেশ দিচ্ছি আর তোমরা শ্রবণ করো এবং আনুগত্য করো।” আবূ দাউদ ও তিরমিযী, আলবানী রহ, মিশকাতুল মাসাবীহতে (১/১৮৫) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।