الرفيق
كلمة (الرفيق) في اللغة صيغة مبالغة على وزن (فعيل) من الرفق، وهو...
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ হিসেবে বর্ণিত, “যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় তখন) তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও।’ অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামায পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।”
হাদীসের অর্থ: যখন কেউ নিদ্রা যায় তখন শয়তান তার মাথার পশ্চাদ্ভাগে তিনটি গিট লাগিয়ে দেয়। শয়তান বাস্তবিক অর্থেই গিট দিয়ে থাকে, যেমন যাদুকর যাদু করার সময় গিট দিয়ে থাকে। সে একটি সুতা নিয়ে তা যাদুর সাহায্যে গিট দেয়, ফলে যাদুকৃত ব্যক্তি এতে প্রভাবিত হয়। ইবন মাজাহর বর্ণনায় এসেছে, “রাতের বেলা তোমাদের প্রত্যেকের মাথার পিছনের অংশে (ঘাড়ে) একটি দড়িতে তিনটি গিরা দেওয়া থাকে।” (ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৩২৯)। শয়তান বিশেষ করে মানুষের মাথার পশ্চাদ্ভাগে গিট দিয়ে থাকে; কেননা এ অংশটি শক্তির কেন্দ্র ও কর্ম সম্পাদনের স্থান। আর এটি শয়তানের সর্বাধিক অনুগত ও তার ডাকে সাড়াদানকারী। সুতরাং, শয়তান যখন তাতে গিট দিয়ে দেয় তখন সে মানুষের অন্তরের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে ও তার ওপর ঘুম ঢেলে দিতে সক্ষম হয়। “প্রত্যেক গিট লাগানোর সময় সে বলে” অর্থাৎ সে তার নিজ হাতে প্রতিটি গিট লাগানোর সময় প্রত্যেক গিটের স্থানে গুরুত্বসহ ও কঠিনভাবে এ কথা বলে যে, “তোমার এখনো অনেক রাত্র বাকী আছে” অর্থাৎ অনেক রাত অবশিষ্ট আছে। সুতরাং, তুমি যতো খুশি ঘুমাও। কারণ, তুমি যখন ঘুম থেকে উঠবে সালাত আদায় করতে যথেষ্ট সময় পাবে। সুতরাং, আবার ঘুমিয়ে পড়ো। “অতঃপর যদি সে ঘুম থেকে জেগে উঠে আল্লাহ তা‘আলার যিকর করে তাহলে একটি গিট খুলে যায়” অর্থাৎ আল্লাহর যিকিরের কারণে একটি গিট খুলে যায়। “অতঃপর যদি অযু করে তাহলে আরো একটি গিট খুলে যায়” অর্থাৎ অযুর বরকতে দ্বিতীয় গিট খুলে যায়। মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, “অতঃপর যদি অযু করে তাহলে দুটি গিট খুলে যায়।” এখানে পবিত্রতার জন্যে বড় নাপাকি থেকে গোসল করলে তাও এ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত। “আর যদি সালাত আদায় করে- যদিও এক রাক‘আত সালাত আদায় করে, তাহলে তার গিটগুলো খুলে যায় “তৃতীয় গিটটি খুলে যায়”। বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, “সমস্ত গিট খুলে যায়”। “ফলে তার সকাল হয় উদ্দীপনাময়” যেহেতু আল্লাহ তাকে তাঁর আনুগত্য করার তাওফিক দিয়েছেন, তিনি তাকে সাওয়াব দানের যে ওয়াদা করেছেন এবং শয়তানের গিট খুলে দেওয়ার তাওফিক দিয়েছেন সে আনন্দে তার উদ্দীপনাময় সকাল হয়। “এবং তার সকাল হয় আন্দময় অন্তরে” আল্লাহ তাকে এসব ভালো কাজ করতে বরকত দান করেছেন সে কারণে তার আনন্দময় সকাল হয়। “অন্যথায়- উপরোক্ত কাজ তিনটি করা সম্ভব না হলে তার সকাল হয় অবসাদ ও বিষাদময়।” অর্থাৎ সে যেসব ভালো কাজে অভ্যস্ত ছিলো বা কল্যাণকর কাজের নিয়ত করেছিলো সে কাজ করতে শয়তান তাকে ব্যর্থ করায় সে অবসাদ ও বিষাদময় অন্তরে সকাল করে। হাফিয ইবন হাজার রহ. বলেছেন, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাতের প্রত্যেক গোপন সালাতে রয়েছে অন্তরের প্রশান্তি, যদিও তা মুসল্লীর মনে জাগ্রত হোক বা না হোক। এদিকে ঈঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী।” [সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত: ৬]