المليك
كلمة (المَليك) في اللغة صيغة مبالغة على وزن (فَعيل) بمعنى (فاعل)...
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ তালহা (আমার মা) উম্মে সুলাইমকে বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কণ্ঠ স্বরটা খুব ক্ষীণ শুনলাম। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। তোমার নিকট কিছু আছে কি?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি কিছু যবের রুটি তার ওড়নার এক অংশ দিয়ে বেঁধে গোপনে আমার কাপড়ের নিচে গুঁজে দিলেন। আর অপর অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠালেন। আমি তা নিয়ে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। তাঁর সাথে কিছু লোক ছিল। আমি তাদের নিকটে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “তোমাকে আবূ তালহা পাঠিয়েছে?” আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “খাবারের জন্যে ?” আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (সাথীদেরকে) বললেন, “ওঠ।” সুতরাং তাঁরা রওনা হল। আমিও তাঁদের আগে আগে চলতে লাগলাম এবং আবূ তালহার নিকট এসে খবর জানালাম। তখন আবূ তালহা বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরসহ আমাদের নিকট এসেছেন, অথচ আমাদের নিকট সবাইকে খাওয়ানোর মত খাদ্য সামগ্রী নেই (এখন কী করা যায়)?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন।’ অতঃপর আবূ তালহা (আগে) গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে আগমন করলেন এবং উভয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! তোমার নিকট যা আছে নিয়ে এসো।’ সুতরাং তিনি ঐ রুটিগুলো এনে হাজির করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলিকে টুকরা টুকরা করতে আদেশ করলেন। অতঃপর তার উপর উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঢেলে তরকারি বানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় যা বলার বললেন। তারপর বললেন, “দশজনকে আসতে বল।” তখন দশজনকে আসতে বলা হল। তারা এসে পরিতৃপ্তি সহকারে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, “আরো দশজনকে আসতে বল।” তখন আরও দশজন এসে খেয়ে তৃপ্ত হল। আগত লোকদের সংখ্যা ছিল ৭০ কিংবা ৮০ জন। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) অন্য বর্ণনায় আছে, দশজন ক’রে প্রবেশ করতে ও বের হতে থাকল। এমনকি শেষ পর্যন্ত এমন কোন ব্যক্তি বাকী রইল না, যে প্রবেশ করে পরিতৃপ্তি সহকারে খায়নি। অতঃপর ঐ খাবার জমা ক’রে দেখা গেল যে, খাওয়ার আগের মতই বাকী রয়েছে। অন্য বর্ণনায় আছে, তারা দশ দশজন ক’রে খাবার খেল। এইভাবে শেষ পর্যন্ত ৮০ জন লোককে তিনি খাওয়ালেন। সবশেষে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং গৃহবাসীরা খেলেন এবং তাঁরাও কিছু (খাবার) ছেড়ে দিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, অতঃপর তাঁরা এত খাবার অবশিষ্ট রাখলেন যে, তা প্রতিবেশীদের নিকট পৌঁছে দিলেন। অন্য বর্ণনায় আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এলাম, তারপর দেখলাম যে, তিনি তাঁর সাথীদের সঙ্গে বসে আছেন। তখন তিনি তাঁর পেটে পট্টি বেঁধে ছিলেন। আমি তাঁর কিছু সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন তাঁর পেটে পট্টি বেঁধে আছেন।’ তাঁরা বললেন, ‘ক্ষুধার কারণে।’ অতঃপর আমি (আমার মা) উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহানের স্বামী আবূ তালহার নিকট গেলাম এবং বললাম, ‘আব্বা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পেটে পট্টি বাঁধা অবস্থায় দেখলাম। আমি তাঁর কিছু সাথীকে (এর কারণ) জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেন, ক্ষুধা।’ অতঃপর আবূ তালহা আমার মায়ের নিকট গিয়ে বললেন, ‘তোমার কাছে কিছু আছে কি?’ মা বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার কাছে কয়েক টুকরো রুটি এবং কিছু খেজুর আছে। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট একাই আসেন, তাহলে তাঁকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াব; আর যদি তাঁর সাথে অন্য লোকও এসে যায়, তাহলে তাঁদের জন্য এ খাবার কম হয়ে যাবে।’ অতঃপর তিনি পূর্ণ হাদীস উল্লেখ করেন।
এ হাদীসের অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুব ক্ষুধা পেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কণ্ঠ স্বরটা খুব ক্ষীণ হওয়ার কারণে তার অবস্থা সম্পর্কে আবূ তালহা অবগত হলেন। ফলে আবূ তালহা তার স্ত্রী উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহাকে রাসূলের অবস্থা জানিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে তোমাদের নিকট কিছু আছে কি? উম্মে সুলাইম বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অর্থাৎ আমাদের নিকট এ পরিমাণ খাবার আছে যা দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারব। অতঃপর তিনি কিছু যবের রুটি বের করলেন। তারপর তিনি তার স্বীয় ওড়না নিলেন। তারপর ওড়নার এক অংশ দিয়ে রুটি বেঁধে গোপনে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাপড়ের নিচে গুঁজে দিলেন। আর ওড়নার অপর অংশ চাদর হিসেবে তাকে ডেকে রাখার উদ্দেশ্যে তার গায়ের ওপর জড়িয়ে দিলেন। তারপর আনাস যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলেন, তাকে কতক সাহাবীর মাঝে পেলেন। তিনি তাদের কাছে গিয়ে দাড়ালেন। তখন আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমাকে কি আবূ তালহা পাঠিয়েছে?” আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “খাবারের জন্য নাকি?” আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ অর্থাৎ তোমাকে খাবারের জন্য আমাদের দাওয়াত দিতে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলের সাথে সাহাবীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এবং রাসূলের অভ্যাস হলো সে তার সাহাবীগণের ওপর নিজের অধিকারকে প্রাধান্য দিতেন না, এ কথা জানা থাকার কারণে তাকে দাওয়াত প্রকাশ করার চেয়ে বেশী কিছু করতে পারলেন না, যেন তিনি একাই আবূ তালহার বাড়িতে যান এবং তখন যেন তাকে খাওয়ানোর উদ্দেশ্য হাসিল হয়। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (সাথীদেরকে) বললেন, “ওঠ।” তারা উঠল এবং রওয়ানা দিল। আনাস বলেন, ফলে আমিও তাঁদের আগে আগে চললাম। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত: তার সাথে লোক বেশি হওয়ার কারণে আমি চিন্তিত ছিলাম। তিনি বলেন অবশেষে আমি আবূ তালহার নিকট এসে তাকে খবর জানালাম। তখন আবূ তালহা বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের নিয়ে আসছেন, অথচ আমাদের নিকট সবাইকে খাওয়ানোর মত খাদ্য সামগ্রী নেই (এখন কী করা যায়)?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন।’ উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা বিষয়টি আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের প্রতি সোপর্দ করলেন। যেন তিনি বুঝতে পারলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি ইচ্ছাকৃত করেছেন যাতে খাদ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার কারামত প্রকাশ পায়। এটি তার তীক্ষ্ন বুদ্ধি ও জ্ঞানের পরিপক্কতার প্রমাণ। অতঃপর আবূ তালহা (আগে) গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে আগমন করলেন এবং উভয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘(হে উম্মে সুলাইম!) নিকট এসো।’ অপর বর্ণনায় আছে: আবূ তালহা তাকে এস্তেকবাল করলেন এবং বললেন হে আল্লাহর রাসূল আমাদের নিকট কতক রুটি যা উম্মে সুলাইম তৈরি করেছে তা ছাড়া আর কিছু নাই। অপর বর্ণনায় আছে : আবূ তালহা বলল, এ তো শুধু কয়েকটি রুটি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাতে বরকত দেবেন। অপর বর্ণনায় আছে, আবূ তালহা বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমি আপনার নিকট আনাসকে পাঠিয়েছি যাতে শুধু আপনাকে ডেকে আনে। আমাদের নিকট যাদের দেখছি তাদের ক্ষুধা নিবারণের পরিমাণ খাদ্য নেই। তিনি বললেন, তুমি প্রবেশ কর, কারণ, আল্লাহ তোমার কাছে যা আছে তাতে বরকত দান করবেন। তারপর যখন রাসূলুল্লাহ আবূ তালহার ঘরে প্রবেশ করলেন, তিনি বললেন, হে উম্মে সুলাইম! তোমার কাছে যা আছে তা নিয়ে আসো। সুতরাং তিনি ঐ রুটিগুলো এনে হাজির করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলিকে টুকরা টুকরা করতে আদেশ করলেন। অতঃপর রুটির টুকরোগুলো তরকারি বানাতে তার উপর উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঢেলে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় যা বলার বললেন। অর্থাৎ তিনি দো‘আ করলেন যেন আল্লাহ এই সামান্য খাবারে বরকত দান করেন। অপর বর্ণনায় আছে, ফলে আমি তা নিয়ে আসলাম আর তিনি তার বাঁধন খুললেন ও বললেন, বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তাতে তুমি মহা বরকত দান কর। তারপর বললেন, “দশজনকে আসার অনুমতি দাও। তখন দশজনকে আসতে বলা হল। তারা এসে তৃপ্তিসহ খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, “আরো দশজনকে আসতে বল।” তখন তাদেরকে আসতে বলা হল, এভাবে সবাই খেল ও পরিতৃপ্ত হল। তারা সংখ্যায় ৭০ কিংবা ৮০ জন ছিল। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) অন্য বর্ণনায় আছে, দশজন ক’রে প্রবেশ করতে ও বের হতে থাকল। এমনকি শেষ পর্যন্ত কেউ প্রবেশ করে তৃপ্তিসহ খাওয়া ছাড়া বাকী রইল না। অতঃপর ঐ খাবার জমা ক’রে দেখা গেল যে, খাওয়ার আগের মতই বাকী রয়েছে। অন্য বর্ণনায় আছে, তারা দশ দশজন ক’রে খাবার খেল। এইভাবে শেষ পর্যন্ত ৮০ জন লোককে তিনি খাওয়ালেন। সবশেষে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং গৃহবাসীরা খেলেন এবং তাঁরাও কিছু (খাবার) ছেড়ে দিলেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর তাঁরা এত খাবার অবশিষ্ট রাখলেন যে, তা প্রতিবেশীদের জন্যেও যথেষ্ট হলো।