الحافظ
الحفظُ في اللغة هو مراعاةُ الشيء، والاعتناءُ به، و(الحافظ) اسمٌ...
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি কি তোমাদেরকে আমার ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে হাদীস বর্ণনা করব না। আমরা বললাম হ্যাঁ। সে বলল, তিনি (আয়েশা) বলেন, যে রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে থাকতো, সে রাত আসলে তিনি ঘরে আসলেন এবং চাদর ও জুতা খুলে পায়ের সামনে রাখলেন। আর চাদরের এক পাশকে তিনি বিছানার ওপর বিছিয়ে শুয়ে পড়লেন। তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়েছি এ ধারণা হওয়া পর্যন্ত তিনি অবস্থান করলেন। তারপর তিনি খুব ধীরে ধীরে চাদর নিলেন, খুব ধীরে ধীরে জুতা পরিধান করলেন এবং দরজা খুলে বের হয়ে পড়লেন। তারপর খুব ধীরে তিনি দরজা বন্ধ করলেন। তারপর আমি আমার জামাকে মাথায় রাখলাম, উড়না ও পায়জামা পরলাম এবং তার পিছনে পিছনে চলতে লাগলাম। এরপর তিনি বাকীতে এসে দীর্ঘ সময় দাঁড়ালেন, দুইহাতকে তিনবার উঠালেন। তারপর তিনি ফিরলেন আমিও ফিরলাম। তাড়াতাড়ি করলে আমিও তাড়াতাড়ি করতাম এবং স্বাভাবিক চললে আমিও স্বাভাবিক চলতাম। আমি তার আগেই ঘরে প্রবেশ করলাম এবং শুয়ে পড়লাম। তারপর তিনি প্রবেশ করে বলেলেন, হে আয়েশা! তোমার কি হয়েছে? তুমি বড় আওয়াজে নিশ্বাস ত্যাগ করছ? তিনি বলেন, আমি বললাম, না, কিছুই হয়নি। তিনি বললেন, তুমি জানাবে নাকি আমাকে দয়ালু সংবাদদাতা জানাবেন? তিনি বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আপনার ওপর আমার মা বাবা কুরবান হোক। তারপর সে বিষয়টি তাকে অবগত করেন। তিনি বললেন, তুমিই কি সেই কালো বস্তু যা আমি আমার সামনে দেখতে পেলাম। আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর তিনি আমার সীনায় স্বীয় হাত দ্বারা একটি আঘাত করলেন যাতে আমি ব্যথা পেলাম এবং বললেন, তুমি কি ধারণা করছ যে, আল্লাহ ও তার রাসূল তোমার ওপর কোন অন্যায় করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, মানুষ যাই গোপন করুক আল্লাহ তা অবশ্যই জানে। তিনি বললেন, তুমি যখন আমাকে উঠে যেতে দেখলে তখন জিবরীল আমার কাছে আসল এবং তোমাকে না-জানিয়ে আমাকে গোপনে ডাক দিল। আমি গোপনে তোমাকে না জানিয়ে তার ডাকে সাড়া দিলাম। সে তোমার কাছে আসতে চাইল না কারণ তুমি কাপড় খুলে ফেলছ। আর আমি ধারণা করছিলাম যে তুমি ঘুমিয়ে পড়ছ। তাই তোমাকে জাগানো ভালো মনে করলাম না এবং আশঙ্কা করলাম তুমি একাকিত্ব বোধ করবে। তিনি বললেন, তোমার রব তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছে যে, তুমি যেন বাকীবাসীদের নিকট যাও এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি বললাম, তাহলে আমি তাদের কীভাবে ক্ষমা চাইবো? তিনি বলেন, তুমি বল, মু’মিন ও মুসলিম কবরবাসিগণ তোমাদের ওপর সালাম ! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের পূর্বের এবং পরবর্তীদের প্রতি দয়া করুন। যদি আল্লাহ চান তাহলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে অচীরেই মিলিত হব।
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার মাঝে ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাঝে সংঘটিত একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। ঘটনাটি ঘটেছিল যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম তার রাতে ও তার কাছে ছিলেন। তিনি স্বীয় বিছানায় এসে স্বীয় চাদর রাখেন, জুতা খুলেন এবং উভয়টিকে পায়ের পাশে রাখেন। যখন এ ধারণা হলো যে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, তিনি আমাকে সতর্ক করা ছাড়া খুব ধীরে ধীরে স্বীয় চাদরটি নিলেন, খু্ব আস্তে জুতা পরলেন এবং দরজা খুলে বের হয়ে পড়লেন। তারপর খুব ধীরে দরজাটি বন্ধ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কর্মটি এ জন্য করলেন, যাতে তিনি তাকে না জাগিয়ে বের হন। কারণ, রাতের অন্ধকারে তাকে একা ছাড়লে সে ভয় পেতে পারে। তারপর আয়েশা স্বীয় কাপড় ও উড়না পরলেন এবং তার পিছনে পিছনে চলতে লাগলেন, এমনকি তিনি বাকীতে এসে দাঁড়ালেন। এটি মদীনার কবরস্থান। তিনি দাড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর তিনি দোআয় দুইহাতকে তিনবার উঠালেন। তারপর তিনি স্বীয় ঘরে ফিরার জন্য ঘুরলেন আয়েশাও খুব দ্রুত ঘুরল। তারপর তিনি দ্রুত হাঁটলেন সেও দ্রুত হাঁটল এবং তিনি স্বাভাবিক চললেন সেও স্বাভাবিক চলল। আমি তার আগেই ঘরে প্রবেশ করলাম এবং শুয়ে পড়লাম। তারপর তিনি প্রবেশ করে বলেলেন, হে আয়েশা! তোমার কি হয়েছে? তুমি বড় আওয়াজে নিশ্বাস ত্যাগ করছ? অর্থাৎ তুমি হাঁপাচ্ছো। দ্রুত হাঁটা বা চিৎকার করে কথা বলার কারণে একজন মানুষের মধ্যে যে হাঁপানি-ধারাবাহিক ও বড় বড় নিশ্বাস ত্যাগ ইত্যাদি সৃষ্টি হয় তাই এখানে উদ্দেশ্য। ‘রাবিয়াহ’ অর্থ উঁচু পেট। তিনি বললেন,না, আমার কিছুই হয়নি। তিনি বললেন, তুমি জানাবে নাকি আমাকে দয়ালু সংবাদদাতা জানাবেন? তারপর তিনি সংঘটিত বিষয়টি তাকে জানালেন। তিনি বললেন, তুমিই কি সেই ব্যক্তি যাকে আমি আমার সামনে দেখতে পেলাম। আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর তিনি তার সীনায় স্বীয় হাত দ্বারা আঘাত করলেন যাতে সে ব্যথা পেল এবং বললেন, তুমি কি ধারণা করছ যে, আল্লাহ ও তার রাসূল তোমার ওপর কোন অন্যায় করবে? অর্থাৎ যে রাত্রিটি তোমার জন্য নির্ধারিত সে রাতে আমি আমার অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে যাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, মানুষ যাই গোপন করুন আল্লাহ তা জানেন। অর্থাৎ, মানুষ যাই গোপন করুক না কেন তা কি আল্লাহ জানে না। কেমন যেন তিনি যখন এ কথা বললেন, তখন নিজের নফসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বললেন: হ্যাঁ। তারপর তিনি তাকে জানালেন, জিবরীল আমার কাছে আসল তবে ভিতরে প্রবেশ করেনি। কারণ, আয়েশো কাপড় খুলে ফেলছে এবং ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারণা করল যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাকে জাগানো ভালো মনে করল না যাতে সে রাতের অন্ধকারে একা ভয় না পায় সে জন্য। জিবরীল তাকে বললেন, তোমার রব তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছে যে, তুমি যেন বাকীবাসীদের নিকট যাও এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ পালনার্থে বাকী কবরবাসীদের কাছে আসলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করলেন। আয়েশা বলেন, তাহলে আমি তাদের জন্য কীভাবে ক্ষমা চাইবো? তিনি বলেন, তুমি বল, মু’মিন ও মুসলিম কবরবাসিগণ তোমাদের ওপর সালাম ! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের পূর্বের এবং পরবর্তীদের প্রতি দয়া করুন। যদি আল্লাহ চান তাহলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে অচীরেই মিলিত হব”।