الأحد
كلمة (الأحد) في اللغة لها معنيانِ؛ أحدهما: أولُ العَدَد،...
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দশটি কাজ প্রকৃতিগত আচরণ; (১) গোঁফ ছেঁটে ফেলা। (২) দাড়ি বাড়ানো। (৩) দাঁতন করা। (৪) নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা। (৫) নখ কাটা। (৬) আঙ্গুলের জোড়সমূহ ধোয়া। (৭) বগলের লোম তুলে ফেলা। (৮) গুপ্তা-ঙ্গের লোম পরিষ্কার করা। (৯) পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা (শৌচকর্ম) করা।” বর্ণনাকারী বলেন, ১০নং আচরণটি ভুলে গেছি, তবে মনে হয়, তা কুলি করা হবে। বর্ণনাকারী ওকি’ বলেন, ‘ইন্তিকাসুল মা’ মানে পানি দিয়ে ইস্তেঞ্জা করা।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কয়েকটি স্বভাবজাত সুন্নাত সম্পর্কে সংবাদ দেন। “ফিতরাহ” হলো, আল্লাহ যে স্বভাবের ওপর মানব সৃষ্টি করেছেন এবং যে স্বভাবের ওপর চলতে তারা অভ্যস্ত তার নাম। এগুলো সবই ভালো স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। এখানে ফিতরাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, নিরাপদ স্বভাব। কেননা, বিকৃত স্বভাবের কোনো দাম নেই। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক নবজাতক ভালো স্বভাবের ওপর সৃষ্টি হয়। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী, খৃস্টান অথবা অগ্নিপুজক বানায়।” স্বভাবসমূহের প্রথমটি হলো, গোঁফ খাটো করা। অর্থাৎ, এমনভাবে খাটো করা যাতে চামড়া দেখা যায়। কেননা, গোঁফ ছোট করা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অন্তর্ভুক্ত। এতে নাক থেকে নির্গত ময়লা থেকে সতর্ক থাকা যায়। গোঁফ লম্বা হয়ে ঠোটের উপর ঝুলে পড়লে তাতে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণকালে তার সাথে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও গোঁফ লম্বা রাখা স্বাভাবিক সৃষ্ট সৌন্দর্য্যের বিকৃতি; যদিও যারা ভ্রুক্ষেপ করে না, তারা বড় করাটাকে সৌন্দর্য মনে করেন। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নিয়মিত গোঁফ কেটে খাটো করা বা ছেঁটে রাখা। চল্লিশ দিনের বেশি ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। কেননা আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, “গোঁফ কাটা, নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা, বগলের লোম উপড়ে ফেলা ও নখ কাটার ব্যাপারে আমাদের চল্লিশ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, আমরা যেন তার বেশি সময় ছেড়ে না দেই।” [মুসলিম, হাদীস নং 295] দাঁড়ি লম্বা করা, দাঁড়ি হলো, থুতনি ও ও চোয়ালে গজানো চুল। এখানে ‘ইফা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কম হোক বা বেশি হোক দাঁড়ি মুণ্ডন বা খাটো না করে লম্বা করতে ছেড়ে দেওয়া। কেননা ‘ইফা শব্দটি আধিক্য ও পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থে বুঝায়। সুতরাং দাঁড়ি লম্বা করা মানে দাঁড়ি ছেড়ে দেওয়া ও বৃদ্ধি করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “অবশেষে তারা প্রাচুর্য লাভ করেছে।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: 95] দাঁড়ি লম্বা করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন শব্দে অসংখ্য নির্দেশ রয়েছে। যেমন, তিনি বলেছেন, (অফফিরূ); অন্য বর্ণনায় তিনি বলেছেন, (আরখূ); আবার আরেক বর্ণনায় এসেছে, (‘আফূ), এগুলোর অর্থ হলো, তোমরা দাঁড়ি ছেড়ে দাও, তা পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধি করো এবং তা কেটো না। সুতরাং কোনো মুসলিমের কোনো অবস্থাতে দাঁড়ি মুণ্ডানো জায়েয নেই। কেউ এরূপ করলে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের বিপরীত কাজ করল, তাঁর নাফরমানি করল এবং মুশরিকদের সাদৃশ কাজে পতিত হলো। “মিসওয়াক করা” অর্থাৎ মিসওয়াক করা একটি স্বভাবজাত অভ্যাস যা করতে শরী‘আত উদ্বুদ্ধ করেছে। এতে রয়েছে মুখের পবিত্রতা অর্জন ও রবের সন্তুষ্টি লাভ। এ কারণেই শরী‘আত যেকোনো সময় মিসওয়াক করা শরী‘আতসম্মত করেছে; বিশেষ করে অযু ও সালাতের আগে, ঘুম থেকে উঠে, মুখে দুর্গন্ধ হলে এবং দাত হলদে হলে। “নাকে পানি দেওয়া” অর্থাৎ নাকে পানি দেওয়াও স্বভাবগত অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত। কেননা নাকে পানি দেওয়া হলো নাক পরিষ্কার করা ও নাকের ভিতরের ময়লা দূর করা যা অন্যের জন্য কষ্টকর ও ক্ষতির কারণ। নাকে পানি দেওয়া অযুর সময়ও হতে পারে আবার অযু করা ছাড়াও হতে পারে। যখনই নাক পরিষ্কার করার প্রয়োজন হবে তখনই নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে। এটি মানুষ ভেদে ভিন্ন হতে পারে। কেউ কেউ অযু করা ব্যতীত অন্য সময় নাকে পানি দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না, আবার কারো অনেক বার করার প্রয়োজন হতে পারে। স্বভাবজাত অভ্যাসের মধ্যে আরেকটি হলো, কুলি করা। মুখ ও নাকে অনেক ময়লা জমে থাকে। সুতরাং এ অঙ্গদ্বয় পরিষ্কার করতে গুরুত্ব দেওয়া স্বভাবজাত সুন্নাতের অন্যতম। “নখ কাটা” অর্থাৎ স্বভাবজাত সুন্নাতের আরেকটি হলো হাত ও পায়ের নখ কাটা। সুতরাং পুর্বোক্ত হাদীস অনুযায়ী চল্লিশ দিনের বেশি নখ না কেটে রেখে দেওয়া উচিত নয়। (আরেকটি স্বভাব) “আঙ্গুলের গিরাসমূহ ধৌত করা অর্থাৎ আঙ্গুলের উপরিভাগ ও নিম্নভাগের গিরাসমূহ ধৌত করা। কেননা এতে ময়লা জমে থাকে এবং এসব জায়গা কোঁকড়ানো ও সঙ্কুচিত হওয়ার কারণে কখনো কখনো পানি প্রবাহিত করলে তাতে নাও পৌঁছতে পারে। তাই একহাতে পানি ঢেলে আরেক হাত দ্বারা তা মর্দন করলে তাতে পানি ঠিক মতো পৌঁছে। তাই এ ব্যাপারে যত্ন নেওয়া স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। হাত-পায়ের গিরাসমূহের সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গও যুক্ত হবে যেসব অঙ্গে সাধারণত ঘাম বা অন্য ময়লা লেগে থাকে, যেমন কানের ছিদ্র, বগল, উরুর ভিতরের অংশ ও অন্যান্য গুপ্তাঙ্গসমূহ। “বগলের পশম উপড়ে ফেলা” অর্থাৎ স্বভাবগত অভ্যাসের আরেকটি হলো বগলের পশম উপড়ে ফেলা। এটি এমন একটি স্থান যাতে বেশি পরিমাণে ঘাম হয়। ফলে এতে ময়লা জমে এবং দুর্গন্ধ হয়। তাই পূর্বোক্ত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস মোতাবেক চল্লিশ দিনের বেশি বগলের পশম না উপড়ে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। উত্তম হচ্ছে বগলের পশম উপড়ে ফেলা। যদি উপড়ে ফেলা কষ্টকর হয় তবে কামানো বা পশম দূরীকরণ ক্রিম ব্যবহার করতে অসুবিধে নেই। কেননা বগলের পশম উপড়ে ফেলার উদ্দেশ্য হলো এগুলো দূর করে বগল পরিষ্কার করা। আর কামানো বা ক্রিম ব্যবহার করে তা দূর করলে সে উদ্দেশ্য অর্জিত হয়। “নাভির নিচের পশম কাটা” অর্থাৎ আরেকটি স্বভাবগত সুন্নাত হলো নাভির নিচে লজ্জাস্থানের আশেপাশের পশম কাটা। সেগুলো মুণ্ডন করে হোক বা উপড়ে ফেলে বা ছেঁটে বা আধুনিক ক্রিম বা অন্য কিছু ব্যবহার করে দূর করা। কেননা মূল উদ্দেশ্য হলো সেগুলো পরিষ্কার করা আর এসব মাধ্যমে তা অর্জিত হয়। সুতরাং পূর্বোক্ত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী চল্লিশ দিনের বেশি নাভির নিচের পশম রেখে দেওয়া উচিত নয়। “এবং পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা” অর্থাৎ সর্বশেষ স্বভাবগত সুন্নাত হলো পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা। কেউ কেউ এটিকে ইস্তিঞ্জা বলে ব্যাখ্যা করেছেন। আবূ দাউদ ও ইবন মাজাহতে ‘আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা এ ব্যাখ্যাটি শক্তিশালী হয়। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “স্বভাবজাত সুন্নাত হলো, কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া এবং লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দেওয়া।” ইস্তিঞ্জা হলো পবিত্র পানি, পাথর, নেকড়া, টিস্যু ও অন্য এমন জিনিস যার দ্বারা ময়লা পরিষ্কার করা যায় তা দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা। বর্ণনাকারী বলেন, আমি দশমটি ভুলে গেছি। তবে তা কুলি করা হতে পারে। এটি বর্ণনাকারীর সন্দেহ। মূলকথা হলো, এগুলো মানুষের বাহ্যিক স্থানকে পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে এবং ক্ষতিকর ও অপছন্দনীয় জিনিস থেকে সুরক্ষা দেয়।