الرفيق
كلمة (الرفيق) في اللغة صيغة مبالغة على وزن (فعيل) من الرفق، وهو...
ীি‘আমর ইবন ‘আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, জাহেলিয়াতের যুগ থেকেই আমি ধারণা করতাম যে, লোকেরা পথভ্রষ্টতার ওপর রয়েছে এবং এরা কোনো ধর্মেই নেই, কারণ তারা প্রতিমা পূজা করছে। অতঃপর আমি এক ব্যক্তির ব্যাপারে শুনলাম যে, তিনি মক্কায় আজব আজব খবর বলছেন। সুতরাং আমি আমার সাওয়ারীর উপর বসে তাঁর কাছে এসে দেখলাম যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুকিয়ে আছেন, আর তাঁর সম্প্রদায় (মুশরিকরা) তাঁর উপর খুব রেখে আছে। সুতরাং আমি মক্কায় তার সাথে সংগোপনে সাক্ষাত করলাম। অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, “আমি নবী।” আমি বললাম, ‘নবী কী?’ তিনি বললেন, “আমাকে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন।” আমি বললাম, ‘কী নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন?’ তিনি বললেন, “জ্ঞাতিবন্ধন (আত্মীয়তার সম্পর্ক) অক্ষুণ্ণ রাখা, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল্লাহকে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে।” আমি বললাম, ‘এ কাজে আপনার সঙ্গে কে আছে?’ তিনি বললেন, “স্বাধীন মানুষ ও কৃতদাস।” তখন তাঁর সঙ্গে আবূ বকর ও বিলাল (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ছিলেন। আমি বললাম, ‘আমিও আপনার অনুগত।’ তিনি বললেন, “তুমি এ কাজ তোমার বর্তমান সময়ে করতে পারবে না। তুমি কি আমার অবস্থা ও লোকদের অবস্থা দেখতে পাও না? অতএব, তুমি (এখন) বাড়ি ফিরে যাও। অতঃপর যখন তুমি আমার জয়ী ও শক্তিশালী হওয়ার সংবাদ পাবে, তখন আমার কাছে এসো।” সুতরাং আমি আমার পরিবারের নিকট চলে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পরিশেষে) মদীনা চলে এলেন, এ দিকে আমার বংশের কতক লোকও মদীনায় আসলো। আমি বললাম, ‘ঐ লোকটার অবস্থা কি, যিনি (মক্কা ত্যাগ করে) মদীনা এসেছেন?’ তারা বলল, ‘লোকেরা তার দিকে ধাবমান। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হয় নি।’ অতঃপর আমি মদীনা এসে তাঁর খিদমতে হাযির হলাম। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে চিনতে পারছেন?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, তুমি তো ঐ ব্যক্তি, যে মক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিল।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা আমার অজানা -তা আমাকে বলুন? আমাকে সালাত সম্পর্কে বলুন?’ তিনি বললেন, “তুমি ফজরের সালাত পড়। তারপর সূর্য এক বল্লম বরাবর উঁচু হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকো। কারণ, তা শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্যভাগে উদিত হয় এবং সে সময় কাফিররা তাকে সাজদাহ করে। পুনরায় তুমি সালাত পড়। কেননা সালাতে যে ফিরিশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন, যতক্ষণ না ছায়া বল্লমের সমান হয়ে যায়। অতঃপর সালাত থেকে বিরত হও। কেননা তখন জাহান্নামের আগুন উস্কানো হয়। অতঃপর যখন ছায়া বাড়তে আরম্ভ করে, তখন সালাত পড়। কেননা, এ সালাতে ফিরিশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন। পরিশেষে তুমি আসরের সালাত পড়। অতঃপর সূর্য ডোবা পর্যন্ত সালাত পড়া থেকে বিরত থাকো। কেননা, সূর্য শয়তানের দু’ শিঙ্গের মধ্যে অস্ত যায় এবং তখন কাফিররা তাকে সাজদাহ করে।” পুনরায় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে অযু সম্পর্কে বলুন?’ তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ পানি নিকটে করে (হাত ধোওয়ার পর) কুল্লি করে এবং নাকে পানি নিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে, তার চেহারা, তার মুখ এবং নাকের গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তার চেহারা ধোয়, তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির শেষ প্রান্তের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার হাত দু’খানি কনুই পর্যন্ত ধোয়, তখন তার হাতের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার মাথা মাসাহ করে, তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের ডগার পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার পা দু’খানি গাঁট পর্যন্ত ধোয়, তখন তার পায়ের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে গিয়ে সালাত পড়ে, আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে -যার তিনি যোগ্য এবং অন্তরকে আল্লাহ তা‘আলার জন্য খালি করে, তাহলে সে ঐ দিনকার মতো নিষ্পাপ হয়ে বেরিয়ে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।” তারপর ‘আমর ইবন আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট বর্ণনা করলেন। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, ‘হে ‘আমর ইবন ‘আবাসাহ! তুমি যা বলছ তা চিন্তা করে বল! এক জায়গায় কি ব্যক্তিকে এতটা মর্যাদা দেওয়া হবে?’ ‘আমর বললেন, ‘হে আবূ উমামাহ! আমার বয়স ঢের হয়েছে, আমার হাড় দুর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মৃত্যুও নিকটবর্তী। (ফলে এ অবস্থায়) আল্লাহ তা‘আলা অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যা বলার আমার কী প্রয়োজন আছে? যদি আমি এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে একবার, দু’বার, তিনবার এমনকি সাতবার পর্যন্ত না শুনতাম, তাহলে কখনই তা বর্ণনা করতাম না। কিন্তু আমি তাঁর নিকট এর চেয়েও বেশিবার শুনেছি।’
‘আমর ইবন ‘আবাসাহ আস-সুলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জাহেলী যুগে তার অবস্থা কেমন ছিল এবং কীভাবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ইসলামের দিকে পথপ্রদর্শন করলেন তা আমাদেরকে জানালেন। জাহেলিয়াতের যুগে তার অন্তরে একটি নূর ছিল যা তাকে বলে দিতো যে, এ সকল লোকেরা বাতিল, শির্ক ও পথভ্রষ্টতার ওপর রয়েছে এবং অন্যান্য লোকেরা যা বিশ্বাস করতো তিনি তা বিশ্বাস করতেন না। অতঃপর তিনি মক্কায় এমন এক ব্যক্তির আবির্ভাব সম্পর্কে অবগত হলেন যে, মক্কায় আজব আজব খবর বলছেন। সুতরাং তিনি তার সাওয়ারীর উপর বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে দেখলেন যে, কাফের কুরাইশদের ভয়ে গুপ্তভাবে দাওয়াতের কাজ করছেন। ‘আমর ইবন ‘আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বিচক্ষণতার সাথে কাজ নিলাম। পরিশেষে আমি মক্কায় তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, “আমি নবী।” আমি বললাম, ‘নবী কী?’ তিনি বললেন, “আমাকে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন।” আমি বললাম, ‘কী নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন?’ তিনি বললেন, “জ্ঞাতিবন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল্লাহকে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে।” এখানে তিনি আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহ্বান করলেন এবং এই মহান দীনের সৌন্দর্য ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণনা করলেন, অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও ভালো আচরণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এমন কিছু অবগত করালেন যা মানুষ তাদের জ্ঞানের মাধ্যমে অবগত হয় যে, এ সমস্ত মূর্তি বাতিল। এ কারণে এ ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করাকে গ্রহণ করে নিল, কারণ সে জানতো যে, মুশরিকরা মূর্তি পূজার যে ইবাদত আঞ্জাম দিচ্ছে তা বাতিল। তিনি সত্য অনুসন্ধান করতে ছিলেন। রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এ বিষয় দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যেমন তিনি বললেন, “জ্ঞাতিবন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখার নির্দেশ দিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন।” এটি হচ্ছে উত্তম চরিত্র। কেননা মক্কাবাসীরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অপবাদ আরোপ করতো যে, তিনি আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে এসেছেন। অতএব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলেন এবং বললেন তিনি জ্ঞাতিবন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখতে আগমন করেছেন, ছিন্ন করতে নয়। “মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা” আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করা হয় তা ভেঙ্গে ফেলতে “এবং আল্লাহকে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা”। ‘আমর ইবন আবাসাহ বলেন, আমি বললাম, ‘এ কাজে আপনার সঙ্গে কে আছে?’ অর্থাৎ এ দীনে আপনার সাথে কে প্রবেশ করেছে? তিনি বললেন, “স্বাধীন মানুষ ও কৃতদাস।” স্বাধীন হলেন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, আর ক্রীতদাস হলেন বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। (তিনি বললেন,) ‘আমিও আপনার অনুগত।’ তিনি বললেন, “তুমি তোমার বর্তমান সময়ে এটা পারবে না।” এর অর্থ হচ্ছে, যদি সে তাঁর অনুসরণ করে এবং তার সম্প্রদায়কে পরিত্যাগ করে তাহলে সে স্বাভাবিকভাবে মক্কায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীতে পরিণত হবে, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে কাফেরদের প্রতিহত করতে সক্ষম হবেন না। অতঃপর তিনি তাকে বললেন, মুসলিম অবস্থায় তুমি তোমার সম্প্রদায়ে অবস্থান করো, যখন এ দীন জয়ী ও শক্তিশালী হওয়ার সংবাদ পাবে, তখন আমার কাছে এসো এবং আমার সাথী হয়ো। বস্তুত এটিই হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের করুণা, দয়া ও সমমর্মিতা। কেননা এই ব্যক্তি ছিল দুর্বল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যক্তিকে বললেন, “তুমি এখন এ কাজ করতে পারবে না। তুমি কি আমার অবস্থা ও লোকদের অবস্থা দেখতে পাও না?” অর্থাৎ কাফেররা সংখ্যায় অনেক, তারা আমাকে কষ্ট পৌঁছায় আর আমি তা প্রতিহত করতে সক্ষম নই। তাহলে কীভাবে আমি তোমার থেকে তা প্রতিহত করবো? অতএব, তুমি (এখন) বাড়ি ফিরে যাও। অতঃপর যখন তুমি আমার জয়ী ও শক্তিশালী হওয়ার সংবাদ পাবে, তখন আমার কাছে এসো। অর্থ হচ্ছে, তোমার ইসলামের ওপর অটল থাকো আমার জয়ী ও শক্তিশালী হওয়া পর্যন্ত, তখন আমার কাছে এসো। তিনি বলেন, “সুতরাং আমি আমার পরিবারের নিকট চলে গেলাম, অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা চলে এলেন, আমি তখন আমার পরিবারেই ছিলাম। ফলে আমি খবরাখবর নিতে আরম্ভ করলাম” কেননা তার অন্তরে ইসলাম প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, “এবং যখন তিনি মদীনায় আগমন করলেন, তখন আমি (তাঁর ব্যাপারে) লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম। অবশেষে আমার পরিবারের কিছু লোক মদীনায় এল। আমি বললাম, ‘ঐ লোকটার অবস্থা কি, যিনি (মক্কা ত্যাগ করে) মদীনা এসেছেন?’ তারা বলল, ‘লোকেরা তার দিকে ধাবমান। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হয় নি।’ তিনি বললেন, তখন আমি মদীনা এসে তাঁর খিদমতে হাযির হলাম। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে চিনতে পারছেন?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ, তুমি তো ঐ ব্যক্তি, যে মক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিল।” তিনি বললেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা আমার অজানা -তা আমাকে বলুন?” তিনি এখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলেন যে, ইসলামের আহকাম কী যা আপনার ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে? আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা আমার অজানা -তা আমাকে বলুন? আমাকে সালাত সম্পর্কে বলুন?’ তিনি বললেন, “তুমি ফজরের সালাত পড়।” অর্থাৎ সময়মত। “তারপর সূর্য এক বল্লম বরাবর উঁচু হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকো।” এর অর্থ হলো, এর পর ফজরের সময় বাকী থাকে না। অতএব, সূর্য এক বল্লম বরাবর উঁচু হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকো। সূর্য উদিত হওয়ার সময় কি নফল সালাত পড়া যাবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, অতএব, সূর্য এক বল্লম বরাবর উঁচু হওয়া পর্যন্ত সালাত থেকে বিরত থাকো।” কারণ, তা শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্যভাগে উদিত হয়। সূর্য উদয়ের সময় কাফিররা সে সময় সূর্যকে সাজদাহ করে। সুতরাং মুসলিমে জন্য স্বেচ্ছায় এ সময় পর্যন্ত ফরয সালাত দেরী করে পড়া জায়েয হবে না এবং সূর্য উদয়ের সময় থেকে সূর্য এক বল্লম বরাবর উঁচু হওয়া পর্যন্ত নফল সালাত পড়া জায়েয হবে না। ক্যালেন্ডারে দেখবেন ‘সূর্যোদয়ের সময়’ দেওয়া আছে; এখানে সেটাই উদ্দেশ্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “কারণ, তা শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্যভাগে উদিত হয় এবং সে সময় কাফিররা তাকে সাজদাহ করে।” অতএব, তিনি আমাদেরকে তাদের সাদৃশ্য থেকে নিষেধ করেছেন।তিনি বলেন, “পুনরায় তুমি সালাত পড়। কেননা সালাত সাক্ষী ও হাজিরা।” অর্থাৎ এই সালাতকে লিখে নেওয়ার জন্যে দিনের ফিরিশতারা উপস্থিত হন এবং যারা সালাত আদায় করে তাদের ব্যাপারে সাক্ষী দেন। এটাই হচ্ছে “মাশহুদাহ মাকতুবাহ” বর্ণনার অর্থ। তিনি বলেন, “যতক্ষণ না ছায়া বল্লমের সমান হয়ে যায়। অতঃপর সালাত থেকে বিরত হও।” অর্থাৎ সূর্য ঢলে যাওয়ার সময়। কেননা এসময় সূর্য মধ্য আকাশে মাথার উপরে থাকে এবং প্রত্যেক বস্তুর ছায়া দু’পায়ের নিচে থাকে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এ সময় তুমি সালাত আদায় করো না। আর এটি এমন এক সময় যাতে সহজভাবে আনুমাণিক দু’রাকাত সালাত পড়া যায়। সুতরাং এ সময় তার জন্য সালাত আদায় করা জায়েয হবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তখন জাহান্নামের আগুন উস্কানো হয়।” অতএব, এ সময় সালাত হারাম। অতএব, এ সময় যে মসজিদে প্রবেশ করবে অপেক্ষা করবে যতক্ষণ না মুয়াজ্জিন আযান দেয়। তিনি বলেন, “অতঃপর যখন ছায়া কাছে আসে।” অর্থাৎ ছায়া কমতে কমতে পায়ের নিচে চলে আসে এবং এরপর বিপরীত দিকে যেতে থাকে; ফলে যোহরের আযানের সময় ছায়া পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে চলে যাওয়া আরম্ভ করে। তিনি বলেন, “অতঃপর যখন ছায়া কাছে আসে তখন সালাত পড়। কেননা, এ সালাতে ফিরিশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন। পরিশেষে তুমি আসরের সালাত পড়।” অর্থাৎ আসর পর্যন্ত ফরয ও নফল সালাত পড়। এটি খোলা সময়। সুতরাং যত ইচ্ছা নফল সালাত পড় -এতে কোনো নিষেধ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অতঃপর সূর্য ডোবা পর্যন্ত সালাত পড়া থেকে বিরত থাকো।” অর্থাৎ যখন আসরের সালাত পড় তখন সূর্য ডোবা পর্যন্ত নফল সালাত পড়ো না।“ অতঃপর সূর্য ডোবা পর্যন্ত সালাত পড়া থেকে বিরত থাকো।” সূর্যোদয়ের সময়ের মতো সূর্যাস্তের পূর্বে দ্বিতীয়বার হারাম ওয়াক্ত ফিরে আসে। এর কারণ হলো, সূর্য শয়তানের দু’ শিঙ্গের মধ্যে অস্ত যায় সুতরাং মুসলিমের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দেরি করে আসর সালাত পড়া জায়েয নেই। কারণ, তা সূর্য পূজারী কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়; মুসলিম ব্যক্তি তার এ কাজের মাধ্যমে এসব কাফিরদের সাথে সাদৃশ্য করে ফেলে, কারণ সে আসরের সালাতকে এতদূর পিছিয়ে এনেছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একে মুনাফিকের সালাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা মুনাফিকরা সূর্যের অপেক্ষা করে; সূর্য যখন হলুদ হয়ে যায় তখন চারবার ঠোকর মারে এবং তাতে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে। তাই, কাফির বা মুনাফিকদের সাথে সাদৃশ্য হওয়া এবং আসরের সালাতকে সূর্য হলুদ হওয়া পর্যন্ত দেরী করা থেকে সাবধান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় সূর্য শয়তানের দু’ শিঙ্গের মধ্যে অস্ত যায় এবং তখন কাফিররা তাকে সাজদাহ করে।” ‘আমর বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে অযু সম্পর্কে বলুন?’ তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ পানি নিকটে করে (হাত ধোওয়ার পর) কুল্লি করে এবং নাকে পানি নিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে, তার চেহারা, তার মুখ এবং নাকের গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তার চেহারা ধোয়, তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির শেষ প্রান্তের পানির সাথে ঝরে যায়।” অর্থাৎ মানুষ যখন অযু করে তখন পানির শেষ ফোটার সাথে সাথে তার পাপরাশি ঝরে যায়। যখন সে তার চেহার ধৌত করে তখন তার মুখ, নাক, চেহারা ও দু’চোখের গুনাহসমূহ পানির সাথে ঝরে যায়। তারপর ‘আমর ইবন আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট বর্ণনা করলেন। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, ‘হে ‘আমর ইবন ‘আবাসাহ! তুমি যা বলছ তা চিন্তা করে বল! এক জায়গায় ব্যক্তিকে এতটা মর্যাদা দেওয়া হয়?’ অর্থাৎ একজন বান্দা একটা জায়গাতেই এত বেশি পেয়ে যাবেন এ ব্যাপারটা তিনি বেশি মনে করলেন। যখন এভাবে অযু করবে তখন তার থেকে সকল গোনাহ ঝরে যাবে। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে গিয়ে সালাত পড়ে, তাহলে সে ঐ দিনকার মতো নিষ্পাপ হয়ে বেরিয়ে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। যেদিন তার কোনো গোনাহ ছিল না। তিনি বললেন, তুমি ভালোভাবে বল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন হয়তো তুমি কোনো কিছু ভুলে গেছো। তখন জবাবে ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আবূ উমামাহ! আমার বয়স ঢের হয়েছে, আমার হাড় দুর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মৃত্যুও নিকটবর্তী। (ফলে এ অবস্থায়) আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মিথ্যারোপ করার আমার কী প্রয়োজন আছে?” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীগণ আল্লাহ অথবা তার রাসূলের ওপর কখনো মিথ্যা বলতে পারেন না। তিনি বলেন, “যদি আমি এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে একবার, দু’বার, তিনবার এমনকি সাতবার পর্যন্ত না শুনতাম, কখনই তা বর্ণনা করতাম না।” অর্থাৎ এই হাদীসটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বলেন নি বরং তিনি সাত বার বলেছেন। আর আরবরা সাত সংখ্যাকে অধিক অর্থ বর্ণনা করে থাকে। হয়তো তিনি এর চেয়েও বেশি বলেছেন। তিনি বলেন, “কিন্তু আমি তাঁর নিকট এর চেয়েও অধিকবার শুনেছি।”